অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করছে নির্বাচন কমিশন। অবশ্য এখনো এর তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। এ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে আন্তর্জাতিক মহলেরও সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এজন্য নির্বাচন আয়োজন ও ভোট সম্পন্ন করতে আন্তর্জাতিক সমর্থনের তৎপরতা শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বিশেষ করে সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সন্তোষজনক ফলাফল অংশগ্রহণকারী দলগুলো মেনে নেবে বলে প্রত্যাশা করছে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচনে সহায়তাকারী দেশি-বিদেশি মহল ও পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বে থাকা সংস্থাগুলোর আনুকূল্য ও সমর্থন চায় অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকেও সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এজন্য জাতীয় নির্বাচনকেন্দ্রিক সব ধরনের কেনাকাটাকেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে দেখা হচ্ছে। সরকারের মধ্যে আর্থিক সংকট থাকা সত্ত্বেও নির্বাচনি কর্মযজ্ঞে অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হলে সেটা বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কূটনৈতিক সহায়তার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পৃথকভাবে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা দিতে বলা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এজন্য বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে যোগাযোগও করা হচ্ছে। যেহেতু এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মতো একটি বড় দল অংশগ্রহণ করতে পারছে না। তাই অন্য সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। গত বছরের জুলাই আন্দোলনে গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এতে অবশ্য প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। যেটাকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যথাসময়ে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে সমর্থন করে বলে গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। আগামী নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিতে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, এবারের ভোটে ইইউর বড় একটি প্রতিনিধিদল পর্যবেক্ষণে থাকবে। সেদিন তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠকও করেছেন। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনে ডিএফআইডি, ইউএসএ, চায়না ও জাপান, কানাডাসহ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা পর্যবেক্ষণের ভূমিকায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। একইভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকেও আমলে নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ, নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থা ও সন্তোষজনক ফলাফল গ্রহণযোগ্য করতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেই বিবেচনায় বিদেশি গণমাধ্যমকেও নির্বাচনের খবর সংগ্রহে অনুমতি দেওয়া হবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনের অনুষ্ঠিত এক সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। তবে ভারতীয় পর্যবেক্ষক কিংবা ভারতীয় কোনো গণমাধ্যমকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ও খবর সংগ্রহের অনুমতি দেওয়া হবে কি না-সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত থেকে পর্যবেক্ষক আসার অনুমতি বাংলাদেশ দেবে কি না, তা সম্পূর্ণ এখতিয়ার হচ্ছে নির্বাচন কমিশনের। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। শুধু তাই নয়, নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সহায়তা না চাইলে পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি পর্যবেক্ষক মিশনকে আলাদাভাবে কোনো সহায়তা দেবে না। এটা সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার।