ব্যবসায়ী সংগঠন, অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে এলডিসি বা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ (এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন) স্থগিত করার দাবি জানানো হয়েছে। অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তারা। রাজনীতিবিদরাও বিভিন্ন সময়ে এ সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক সরকারকে নেওয়ার দাবি করেছেন। তার পরও জাতিসংঘ জানিয়েছে ঠিক সময়ই এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ।
জাতিসংঘের ইউএনসিডিপিতে পাঠানো বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ টেকসইভাবে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পথে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে চলছে। আগামী বছরের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে দেশের আনুষ্ঠানিক উত্তরণ নির্ধারিত রয়েছে। ইউএনসিডিপি বরাবর পাঠানো সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণের দিকে ধারাবাহিক অগ্রগতি অর্জন করছে, যা দেশের স্থিতিস্থাপকতা ও নীতি প্রতিশ্রুতির প্রমাণ। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (ইউএন-সিডিপি)-এর কাছে দাখিল করা বাংলাদেশ অ্যানুয়াল কান্ট্রি রিপোর্ট-২০২৫ এ সরকার জানিয়েছে, এলডিসি উত্তরণে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের তিনটি মানদণ্ডেই বাংলাদেশ সন্তোষজনক অবস্থান ধরে রেখেছে। গত চার বছরে বহুমুখী ধাক্কা মোকাবিলা করেও বাংলাদেশ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সব মানদণ্ড পূরণ করেছে, যা ইউএন-সিডিপি-এর ২০২৫ সালের প্রতিবেদনে পুনরায় নিশ্চিত হয়েছে। কান্ট্রি-রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ তিনটি সূচক মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই), মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ঝুঁকি সূচক সবই পূরণ করেছে। যদিও অর্থনীতির বিভিন্ন দুর্বলতা ও আগামীর চ্যালেঞ্জগুলোর তালিকাও এতে উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে জমা পড়েছে যখন ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে রপ্তানিকারকরা, উত্তরণ-পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতির ঘাটতির কথা উল্লেখ করে উত্তরণ ছয় বছর পর্যন্ত স্থগিত করার দাবি জানিয়েছিল। এ সময় তারা এলডিসি থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশ প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি কমতে পারে বলেও সরকারকে সতর্ক করেছে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের অবস্থান তুলে ধরে বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভুল তথ্য ও মিথ্যা উপাত্তের ভিত্তিতে এলডিসি উত্তরণ চাওয়া হয়েছে। রপ্তানি তথ্য সঠিক ছিল না। আমরা এলডিসি উত্তরণ চাই, কিন্তু এখনো আমরা এর জন্য প্রস্তুত নই।
স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করায় ২০১৮ সালে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি সিডিপির সুপারিশ করে। ২০১৮ সালে ওই কমিটি বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য বলে প্রথম স্বীকৃতি দেয়। দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত স্বীকৃতি দেয় ২০২১ সালে। মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতা এই তিন সূচকে উত্তীর্ণ হয়ে জাতিসংঘের মানদণ্ডে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।