শুক্রবার ছুটির দিনে কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম-সংলগ্ন খোলা জায়গাটি কানায় কানায় পূর্ণ। নাচ-গান কিংবা বিয়ে বা মেজবান অনুষ্ঠান নয়। বাণিজ্য মেলা। এখানে প্রতি বছরই হয় এ মেলা। খুবই জৌলুসের সাথে। প্রাপ্ত-অপ্রাপ্ত বয়স্কদের ভিড়ের স্রোতে আমিও যোগ দিলাম মঞ্জু ভাইকে সাথে নিয়ে। খানিক ঘোরার পর মঞ্জু ভাই বললেন, তুই একটু দাঁড়া এখানে। আমি এখনই আসছি। বলেই হারিয়ে গেলেন মেলার ভেতরে।
ভিড়ের-ধাক্কাধাক্কি এড়াতে ভাবলাম একটু পাশ ঘেঁষে দাঁড়াই। হঠাৎই একটা শব্দ, একটা চেনা কণ্ঠ আমার হৃদয়ের দোতারায় হারানো সুর জাগিয়ে তুলল বহুদিন পর। মোবিনা।
এক অনাবিল আনন্দ ও শঙ্কায় ডান দিকে তাকালাম। হ্যাঁ, সে-ই তো! আমার এক সময়কার বহুবর্ণে বর্ণিল পৃথিবী। যাকে নিয়ে কুঁড়েঘরে বসত গড়ার দ্বৈত স্বপ্ন ছিল আমাদের। আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি নস্টালজিক নয়নে। সেও পূর্ণ চোখে তাকাল আমার দিকে। চার চোখের মিলন হলো যেন কত শতাব্দী পর! সমস্ত পৃথিবীটা আমার সাথে একাত্ম হয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল, মনে হলো আমার সারা পৃথিবী ওলট-পালট হয়ে গেল এক লহমায়। আমাদের ছয় বছরের হারানো প্রেমের প্রত্যেকটা স্মৃতি ভেসে উঠল। কত খুনসুটি, কত ভালোবাসা, বিকেলে হাতের ওপর হাত রাখা। একে অন্যের চোখে ডুবে যাওয়া, আরও কত কী...!
আমি তার দিকে পা বাড়ালাম। দেখলাম, সেও এগিয়ে আসছে। মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দেখি, এক সময়ের উজ্জ্বল রোদেলার মুখে কালো মেঘের ছায়া। অশ্রু চিকচিক করছে চোখের কোণে।
- ভালোই আছিস, মনে হচ্ছে! ভেজা কণ্ঠ মোবিনার।
ওর কথার জবাব দিতে যাব, এমন সময় ভগ্নদূতের মতো ফিরে এলেন মঞ্জু ভাই।
-কী রে, বান্ধবী বুঝি?
-না না! বন্ধু আমার।
এর মধ্যেই ‘ভালো থাকিস রে’ বলে তড়িঘড়ি জনস্রোতে মিশে গেল মোবিনা।
ওর চোখের জলে, আমি ফিরে পেলাম, আমাকে ভালোবেসে আজও কারও চোখের কোণে অশ্রু জমা এবং দীর্ঘশ্বাসের খবর। আকাশে তখন সূর্য ডোবার প্রস্তুতি।