‘আমি বাসের মধ্যে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুন লাগাব এই বাসের মধ্যে।’ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আগুন সন্ত্রাসের অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া মো. শওকত ওসমান বাবু নিজের মোবাইল ফোনে এভাবেই ভিডিও রেকর্ড পাঠিয়েছিলেন নির্দেশদাতার কাছে। তিনি হাজারীবাগ থানার ২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে উদ্ধার করা বাবুর মোবাইলে এই রেকর্ড পেয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে শওকত ওসমান বাবুসহ চারজন ভয়ংকর অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিরা হলেন, ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মিলন খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ সাব্বির শেখ, যুবলীগ নেতা তাহিদুল ইসলাম অপু। তাদের কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদায় করা সম্ভব হয়েছে। এরই মধ্যে তারা নিজেদের অপরাধও স্বীকার করেছেন।’ বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে আসা এ সংক্রান্ত কয়েকটি ভিডিওর একটিতে দেখা গেছে, বাবু হাজারীবাগ ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াকিপকে বলছিলেন, ‘আমরা সবাই একসঙ্গে আছি। ভাই চিন্তা কইরেন না। আমরা সবাই একসঙ্গে আছি।’ বাসে আগুন দেওয়ার কাজ শেষ করে সিএনজিতে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ওয়াকিপকে এই ভিডিও পাঠান বাবু।
এর আগে তিনি আরেকটি ভিডিওতে বলেন, ‘২২ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের পক্ষ থেকে একটা কর্মসূচি হবে এখন। একটা কাজে আছি আমি।’ একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বাবু রয়েছেন রাইদা পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের ভিতর। সেখান থেকে নিজের মোবাইলে একটি ভিডিও করেন তিনি। ভিডিওতে বলছিলেন, ‘এই দেখ বন্ধু আমি রওনা দিছি। বাসে আছি এখন। কিছু সময়ের মধ্যে এই বাসটা পোড়াব।’ আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাসে আগুন দেওয়া দুর্বৃত্তদের একজন হেসে হেসে বলছেন, ‘পানি মার। পানি মার। পানি মার নাইলে আগুন মার।’ তিনি আবার বলছিলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসরে খবর দে।’
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, বাবু হাজারীবাগ ২২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুর রহমান ওয়াকিপের নির্দেশে ভয়ংকর নাশকতার কাজ করে যাচ্ছিলেন। ৫ আগস্টের পর মালয়েশিয়া পালিয়ে গেলেও গত ১৫ নভেম্বর তিনি দেশে ফেরেন। তার নির্দেশনায় গত ১৬ নভেম্বর হাজারীবাগ এলাকার বেড়িবাঁধে যুবলীগ কর্মী অপু একটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে। বিগত বছরগুলোতে বিরোধী মত দমনে শওকতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল হাজারীবাগ ও ধানমন্ডির মানুষ। বাবু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহসভাপতি মিলন খানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তাওহিদুল ইসলাম অপুকে হাজারীবাগ এবং সাব্বির শেখকে কামরাঙ্গিরচর থেকে গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি থানা পুলিশ।