গত এক বছরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ১২ হাজারেরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে কমিশন ১ হাজার ৬৩টি অভিযোগের অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময়ে মামলা হয়েছে ৫৪১টি এবং চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ৩৪৯টির। গত অক্টোবর পর্যন্ত সাজা হয়েছে ১২৬টি মামলায়। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৩২১ কোটি ৮৪ হাজার টাকা। এসব দুর্নীতির মামলার আসামিদের মধ্যে বেশির ভাগই গত সরকারের সুবিধাভোগী।
গত বছর পট পরিবর্তনের পর নতুন উদ্যমে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এর মধ্যে দুদকের জালে আটকে যান আওয়ামী লীগ সরকারের প্রায় শতাধিক এমপি-মন্ত্রী ও শীর্ষ নেতা।
আজ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হবে। দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা : গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’। দিবসটি পালন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে দুদক।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) আকতারুল ইসলাম জানান, গত এক বছরে হওয়া দুর্নীতির মামলায় আসামি ২ হাজার ২৯৭ জন। চার্জশিট দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ২০৩ জনের বিরুদ্ধে। গণশুনানি হয়েছে ২৩টি। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজের অনিয়ম, ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে ৮৬৪টি। এসব অভিযানের পর মামলা হয়েছে ৩০টি।
দুদক সূত্র জানায়, গত ১৫ বছরে সরকারি দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা একের পর এক ছাড় পেয়ে গেলেও বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান বা তদন্তে খুবই কঠোর অবস্থানে ছিল দুদক। অনেক ঘটনায় দৃশ্যমান প্রমাণ থাকলেও দুদকের কর্মকর্তারা এর কোনো প্রমাণ পাননি। নির্বাচন কমিশনে নিজেদের দেওয়া হলফনামায় আর্থিক অনিয়মের প্রমাণ থাকলেও ভুল হয়েছে অজুহাত গ্রহণ করে অনেককে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদের হলফনামা নিয়ে দুদকের অনুসন্ধান হলফনামায় তথ্য দিতে ‘ভুল হয়েছে’ যুক্তি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এবং এমপি আসলামুল হককে অভিযোগ থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি এনামুল হকের বিরুদ্ধে ২১৩ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে অনুসন্ধান কর্মকর্তা মামলার সুপারিশ করলেও তাকে অব্যাহতি দিয়েছিল তৎকালীন দুদক। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে দলটির নেতা-কর্মী ও সরকার সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাড়তে থাকে দুদকে। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ১৩ আগস্ট থেকে সংস্থাটির অনুসন্ধান কার্যক্রমে গতি পায়। জানা গেছে, দুদকের করা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নিম্ন আদালতে সাড়ে ৩ হাজারের বেশি মামলা বিচারাধীন।