বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৫৪ বছর চলে গেলেও বাংলাদেশের মানুষ সম্মানের সঙ্গে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কারণ বর্গিরা চলে যাওয়ার পর দেশের ভিতর থাকা চিলেরা ছুঁ মেরে জনগণের সম্পদ নিয়ে চলে গেছে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করে পাচার করেছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া গড়ে তুলেছে। কেউ কেউ পালাতে গিয়ে খালে-বিলে আবার কেউ কলাপাতার ওপর আশ্রয় নিয়েছে। এভাবে অপকর্মের দায় নিয়ে ফ্যাসিস্টরা দেশ থেকে পালিয়েছে। কিন্তু ফ্যাসিজমের কালো ছায়া বাংলাদেশ থেকে যায়নি।’
গতকাল বিকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে ইসলামি ও সমমনা আট দলের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ওপর গণভোট, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডসহ পাঁচ দফা দাবি এবং গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর বিজয় নিশ্চিতে এ সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল।
জামায়াতের আমির বলেন, ‘একদল যে অপকর্ম করে চলে গেছে, আরেক দল সেই অপকর্মের দায়িত্ব নিয়েছে। একদল চাঁদাবাজির কারণে জনগণের ঘৃণা কুড়িয়েছে, আরেক দল তার চেয়ে বেশি শক্তি নিয়ে চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। একদল দখলদার বনতে গিয়ে জনগণ দ্বারা প্রত্যাখাত হয়েছে, আরেক দল বেপরোয়া দখলদার হয়ে উঠেছে। একদল জনগণের জানমাল নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, আলেম-ওলামাদের নির্যাতন করেছে, পঙ্গু করেছে, জেলে ভরেছে, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসি দিয়েছে, দেশছাড়া করেছে, এখন আরেকটি দল একই পথ ধরেছে।’
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘এত প্রাণ উৎসর্গ, ত্যাগ ও রক্তদানের পর দেশের মানুষ আশা করেছিল অতীতের অপকর্মের পরিণতির শিক্ষা নিয়ে রাজনীতিবিদরা নতুন রাজনীতি শুরু করবেন। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে দেখতে পাচ্ছি একদল সেই পুরোনো ধারায় পড়ে আছে। তারা কোনো সংস্কারে রাজি নয়, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজি নয়। তারা গণভোটেও প্রথমে রাজি ছিল না। পরে তারা জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট দিতে সরকারকে বাধ্য করেছে।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এত দিন যারা নির্বাচন নির্বাচন করে চিৎকার করেছে এখন তাদের অনেকেই ভিন্ন সুরে কথা বলছেন। এ লক্ষণ ভালো নয়। তারা বুঝতে পারছেন অপকর্মের কারণে আগামী নির্বাচনে দেশবাসী তাদের লাল কার্ড দেখাতে প্রস্তুত। এই লাল কার্ড থেকে বাঁচতে কেউ যদি আগামী নির্বাচন ভণ্ডুল করার চেষ্টা করে তবে দেশের জনগণ তাদের ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করে দেবে। কেউ যদি নির্বাচনে প্রশাসনিক ক্যু চিন্তা করে তবে বলতে চাই, যে সূর্য ডুবে গেছে তা আর উঠবে না। বাংলার আকাশে আর কোনো দিন কালো সূর্য উদিত হবে না। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে লুটেরাদের হাত থেকে বাংলাদেশকে দেশপ্রেমিক জনতার হাতে তুলে দেওয়া হবে।’
সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন শুধু প্রতীকের নির্বাচন নয়। এটা জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোটেরও নির্বাচন। তাই আট দলের নেতা-কর্মীদের ঘরে ঘরে, জনে জনে গিয়ে দলীয় প্রতীকের প্রচারের পাশাপাশি ‘হ্যাঁ’ ব্যালটে ভোট দিতে উদ্ধুদ্ধ করতে হবে। মামুনুল হক আরও বলেন, জুলাই সনদকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ দুই শিবিরে বিভক্ত। একটি পক্ষ রাষ্ট্রীয় সংস্কার ব্যাহত করতে চায়। তারা মনে করে বিগত দিন বছরের পর বছর একদল শাসন করেছে। আগামীতে আরেক দল করবে। দেশের সম্পদ লুটপাট করবে। তারা দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার হরণ করতে চায়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ৫৩ বছর যারা আমাদের জিম্মি করে রেখেছিল, তাদের আমরা দেখেছি। তারা নিজেদের কাছে নিজেরা নিরাপদ নয়। তারা আজ নিজেরা নিজেদের খেয়ে ফেলছে। আমরা চেয়েছিলাম গুম, খুনের বিচার হবে, দেশের সম্পদ পাচারকারীদের বিচার হবে, রাষ্ট্রীয় সংস্কার হবে, এরপর লেভেল প্লেয়িং পরিবেশ তৈরির পর নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা হতবাক আজ একটি পক্ষ দৃশ্যমান বিচার ও রাষ্ট্রীয় সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা নির্বাচনের জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিল। এখন জনগণ তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে দেখতে পেয়ে তারা নির্বাচন পেছানোর জন্য পাগল হয়ে গেছে।’
সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির মাওলানা সারওয়ার কামাল আজিজি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমির মাওলানা হাবীবুল্লাহ মিয়াজী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি-বিডিপির সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল হক চাঁন প্রমুখ।