স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের মূল হোতা আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের একটি মামলায় জামিন দিয়েছেন হাই কোর্ট। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে এ জামিন বহাল থাকার পর তিনি কারাগার থেকে বেরিয়েও গেছেন। এ ঘটনাটি গণমাধ্যমের কাছে আড়াল ছিল। তবে গতকাল এ বিষয়ে তথ্য পেয়ে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশ প্রতিদিন। পরে জানতে চাওয়া হলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও মিঠুর আইনজীবীও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২৭ নভেম্বর বিচারপতি কে এম রাশেদুজ্জামান রাজা ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ মিঠুকে জামিন দেন। জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে হাই কোর্ট এ রায় দেন। এরপর এ জামিন স্থগিত চেয়ে দুদক আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে ১ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. রেজাউল হক নির্দেশনাসহ ‘নো অর্ডার’ (কোনো আদেশ নয়) দেন। এরপর ২ ডিসেম্বর হাই কোর্টের জামিনের আদেশ নিশ্চিতকরণ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
জানা গেছে, এর আগে গত ২৬ অক্টোবর মিঠুকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাই কোর্ট। বিচারপতি কে এম হাফিহুল আলম ও বিচারপতি কাজী ওয়ালিউল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। দুদকসহ সংশ্লিষ্টদের দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয় আদেশে।
হাই কোর্টে মিঠুর জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইজীবী জয়নুল আবেদীন, জহুরুল ইসলাম মুকুল, মোহাম্মদ শিশির মনির, মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন এবং আইনজীবী হারুন অর রশীদ। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন কামরুজ্জামান কচি। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আকতার রুবি।
গতকাল জানতে চাইলে মিঠুর আইনজীবী মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রুল শুনানির পর হাই কোর্ট জামিন দিয়েছেন। আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত জামিন বহাল রেখেছেন। বিদেশে যেতে হলে আদালতের অনুমতি লাগবে চেম্বার আদালত এমন নির্দেশনাও দিয়েছেন। আদেশের অনুলিপি পেলে বিস্তারিত বলা যাবে। চেম্বার জজ আদালতে জামিন বহাল থাকার পর তিনি (মিঠু) কারাগার থেকে বেরিয়ে গেছেন বলে জানান এই আইনজীবী।
দুদকের আইনজীবী কামরুজ্জামান কচি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুর বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছিল। ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি কারাগারে ছিলেন। গত অক্টোবর মিঠু হাই কোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের শুনানি নিয়ে ২৬ অক্টোবর হাই কোর্ট জামিন প্রশ্নে রুল দিয়েছিলেন। সেই রুল শুনানি করে হাই কোর্ট তাকে জামিন দেন। আইনজীবী কচি বলেন, আমরা এই জামিন স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে গিয়েছিলাম। তবে আপিল বিভাগ ‘নো অর্ডার’ দিয়ে জামিন বহাল রেখেছেন। আসামি মিঠু যেন বিদেশে যেতে না পারেন, সে বিষয়েও নির্দেশনা দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য খাতে সিন্ডিকেট করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় আলোচিত ঠিকাদার মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠুকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ওইদিনই তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। নিম্ন আদালতে জামিন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে হাই কোর্টে আসেন মিঠু। তার আগে ১০ সেপ্টেম্বর ৭৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মিঠুর বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দেয় দুদক। দুদকের উপপরিচালক মো. সাইদুজ্জামান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় (ঢাকা-১) এ মামলাটি করেন।