পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অধ্যাদেশ জারির পর সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীকে এ সচিবালয়ের সচিব হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁকে এ দায়িত্ব অর্পণ করেন। এর ফলে একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়েল প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।
পৃথক সচিবালয় গঠনে অধ্যাদেশ জারির পর এ সচিবালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার মূল শর্ত অর্গানোগ্রাম তৈরির কাজও শুরু হয়ে গেছে। আর অর্গানোগ্রাম চূড়ান্ত হলে এ আলোকেই হবে জনবল নিয়োগ। অর্গানোগ্রাম ও জনবল নিয়োগ হলেই সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রায় গেজেট জারি করা হবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে গতকাল এসব তথ্যই জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অধ্যাদেশ জারির পর থেকেই আমাদের মূল কাজটা শুরু হয়েছে গেছে। এ অধ্যাদেশের অধিকাংশ ধারা অবিলম্বে কার্যকরের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ওই ধারাগুলো এখন থেকেই কার্যকর। এরই মধ্যে বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতাও সুপ্রিম কোর্টের হাতে চলে এসেছে। তবে সচিবালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে হলে গেজেট নোটিফিকেশনের কথা বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। সচিবালয়ের অর্গানোগ্রাম ও জনবল নিয়োগ হলেই এই গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা যাবে। তিনি বলেন, অর্গানোগ্রাম তৈরির কাজও আমরা শুরু করে দিয়েছি। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সভাও আহ্বান করা হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে খসড়া অনুমোদনের পর গতকাল রবিবার সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ-২০২৫ জারি করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা হলে অধস্তন আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবে এ সচিবালয়। গতকাল সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্টের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের অধ্যাদেশ স্বাগত জানিয়েছেন আইনজীবীরা : বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে জারি করা ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ’ স্বাগত জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। এ অধ্যাদেশকে বিচার বিভাগের ইতিহাসে এক সোনালি সংযোজন ও মাইলফলক পদক্ষেপ হিসেবেও দেখছেন তাঁরা। তাঁদের মতে এ অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটবে।
এর আগে ২০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অধ্যাদেশের খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পর রবিবার রাতে এ অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি।
এর মধ্য দিয়ে বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার পথ খুলেছে বলে জানিয়েছেন বিচার বিভাগসংশ্লিষ্টরা। এরপর গতকাল সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা নিজ নিজ প্রতিক্রিয়া জানান।
অন্যদিকে জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের জন্য পৃথক সচিবালয় স্থাপন, সচিবালয়ের কার্যক্রম চালুর জন্য গেজেট প্রজ্ঞাপনসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সারা দেশের বিচারকদের সংগঠন বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। পৃথক সচিবালয় গঠনের অধ্যাদেশকে স্বাগত জানিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া বিবৃতিতে এ আহ্বান জানানো হয়।
বিচার বিভাগ পৃথক্করণ মামলার বাদী, সাবেক বিচারক মাসদার হোসেন সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি বিষয়ে বলেন, ‘এটা শুধু বিচার বিভাগই নয়, সারা দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এ অধ্যাদেশ জারি করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান বিচারপতিকে ধন্যবাদ জানাই।’
নিজের প্রতিক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা মনে করি জাতির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে এবং দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে একটা সোনালি সংযোজন।’ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ অধ্যাদেশের ফলে সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের মধ্যকার দ্বৈতশাসনের অবসান ঘটবে।’ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক পদক্ষেপ।’
যাবতীয় কাজ শেষ করার আহ্বান বিচারকদের : বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের বহুল আকাঙ্ক্ষিত স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি করেছে। এ অধ্যাদেশ জনগণের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অন্যতম বন্দোবস্ত এবং ঐতিহাসিক দলিল হয়ে থাকবে।’