ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া নির্বাচন করবেন এটা পুরোনো খবর। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে তিনি যা বলেছেন, রীতিমতো বিস্ফোরক। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি নির্বাচনে অংশ নেব সে ঘোষণা দিয়েছি। আমরা দুই ছাত্র উপদেষ্টা ছাড়াও অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন এমন আরও অনেকেই নির্বাচন করবেন এমন কথাও আছে।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার আগে পদত্যাগ করব এবং তারপরই নির্বাচনে অংশ নেব, সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তবে বাকি সরকারি প্রক্রিয়া বা নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
কোন রাজনৈতিক দল থেকে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন, ‘রাজনৈতিক এ বিষয়ে মন্তব্য না করাই ভালো।’
সবাই জানে দুই ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ এবং মাহফুজ আলম আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আছে ব্যাপক আপত্তি এবং বিরক্তি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে এই উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। গণমাধ্যমে খবর হয়েছিল, এই দুই উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে বলা হলেও তারা রাজি হননি। এরা দুজনেই নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। স্থানীয় সরকার এবং তথ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ। প্রধান উপদেষ্টা প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন হলে, বাকি আছে সর্বোচ্চ আড়াই মাস। এই সময়ে তাদের দায়িত্বে থাকাটা কেবল অনৈতিক নয়, পক্ষপাতিত্বপূর্ণও বটে। এই দুই উপদেষ্টাকে নিয়েই যখন অস্বস্তি, তখন আসিফ মাহমুদ জানালেন আরও উপদেষ্টারা নাকি নির্বাচন করবেন! আসিফ মাহমুদের এই বক্তব্যের দুটি দিক রয়েছে। প্রথমত, আসিফ মাহমুদের বক্তব্য যদি সত্যি বলে থাকেন তাহলে এই সরকারের নিরপেক্ষতা বড় ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে। অন্তর্র্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা হারাবে। মনে রাখতে হবে, এই সরকার দলমতের ঊর্ধ্বে থাকার অঙ্গীকার করেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা বারবার বলেছেন, এই সরকার সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালত এক ঐতিহাসিক রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১৪তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে বলে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আগামী নির্বাচনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতামুক্ত রাখার অন্যতম কারণ হলো বর্তমান সরকারের নিরপেক্ষতা। এই সরকারের সবাই নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সময়ে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে তা হবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা। সত্যিই যদি বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আর যাই হোক, নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে না। একটি প্রশ্নবিদ্ধ বিতর্কিত নির্বাচন দেশকে অস্থিতিশীল করবে। তাই আসিফ মাহমুদের বক্তব্যের ব্যাপারে সরকারের স্পষ্ট অবস্থান জানাটা দেশের স্বার্থে অত্যন্ত জরুরি। এটা যদি সঠিক হয়, তাহলে এই উপদেষ্টা পরিষদ দিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে কিনা তা অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে। আর যদি তার বক্তব্য অসত্য হয়, তাহলে আসিফ মাহমুদের এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। একজন ব্যক্তির জন্য বহুল কাক্সিক্ষত একটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে না। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি যে গোটা উপদেষ্টা পরিষদকে বিতর্কিত করেছেন, তা কী তিনি বুঝতে পেরেছেন? এই দুই ছাত্র উপদেষ্টা বারবার নানারকম বিতর্কিত মন্তব্য করে সরকারকে বিব্রত করেছেন। কিন্তু এই সময়ে এ ধরনের বালখিল্য আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই দুই উপদেষ্টা নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপির সঙ্গে যুক্ত। তাদের কারণেই এনসিপির জোট গঠন বাধাগ্রস্ত হয়েছে- এমন খবরও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তাই, আগামী নির্বাচনকে বিতর্কিত করতে এই দুজনই যথেষ্ট। আর এ রকম একটি বিতর্কিত নির্বাচন হলে সব অর্জন, সব স্বপ্ন বিলীন হয়ে যাবে। তাই অনতিবিলম্বে অন্তর্র্বর্তী সরকারকে পরিপূর্ণ নিরপেক্ষভাবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। কঠোর হতে হবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।