দেশের রাজনৈতিক মাঠে নতুন উত্তাপ সৃষ্টি করেছে এনসিপি ও এবি পার্টির নেতৃত্বাধীন তৃতীয় ধারার জোট গঠনের উদ্যোগ। উদীয়মান এ তৃতীয় জোটকে অনেকেই দেখছেন একটি নতুন ধারা তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবে। রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতকে চ্যালেঞ্জ জানাতে মাঠে আসতে যাওয়া জোটটির সামনে দেখা দিয়েছে ঐক্যের চ্যালেঞ্জ।
জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় ধারার একটি জোট গঠনের দিকে এগোচ্ছিল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল। বৃহস্পতিবার এ জোটের একটি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার কথা ছিল।
কিন্তু এনসিপির আপত্তির কারণে তা ভেস্তে যায়। অর্থাৎ ‘ঐক্য’ না হওয়ায় ভেস্তে গেছে জোটের আত্মপ্রকাশ। একই অবস্থা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতৃত্বাধীন বাম জোটেও। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাম জোট ঘোষণার কথা থাকলেও নানান টানাপোড়েনে এ জোটের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশে জট লেগেছে। অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে এ জট লেগেছে বলে জানা গেছে।
আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের জোটের আত্মপ্রকাশ পিছিয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা জানাতে পারব।’ নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার আগে সিপিবির নেতৃত্বাধীন নতুন জোটের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আমাদের আলোচনা চলছে। আমরা কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছি। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলে এ জোটের আত্মপ্রকাশ হতে পারে।’ রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক শক্তির দ্বিধাবিভক্ত প্রভাব বিরাজমান। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দেশের রাজনীতির চিত্র পাল্টে গেছে। রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে জনগণের কাক্সিক্ষত গণতান্ত্রিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হলে বিকল্প শক্তির চাহিদা বাড়ে। এ প্রেক্ষাপটে তৃতীয় ধারার জোট গঠনের উদ্যোগ সময়োপযোগী হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।
জানা গেছে, জন্মের পরই এনসিপি জাতীয় রাজনীতিতে একটি বিকল্প গণতান্ত্রিক কাঠামো গঠনের বক্তব্য দিয়ে আসছে। তৃতীয় জোট গঠনের উদ্যোগে এনসিপির অংশগ্রহণ তাই নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তারা মনে করছে, বিচ্ছিন্ন ছোট দলগুলোকে এক প্ল্যাটফর্মে আনলে একটি কার্যকর বিরোধী কণ্ঠস্বর তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে মাঠ পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড বাড়িয়ে জনগণের কাছে যাওয়াই তাদের প্রধান কৌশল হিসেবে দেখা যাচ্ছে। নতুন জোটের সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে আন্তদলীয় সমন্বয়। অতীতে দেখা গেছে, বিকল্প রাজনৈতিক জোটগুলোর বেশির ভাগই নেতৃত্বসংকট, মতাদর্শিক দ্বন্দ্ব এবং অভিন্ন কর্মসূচির অভাবে টিকে থাকতে পারেনি। তাই এ উদ্যোগ সফল করতে হলে নেতৃত্ব নির্ধারণ, নীতিগত অবস্থান এবং দীর্ঘমেয়াদি রোডম্যাপ প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরি। জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি বাড়ানো, ভোটারদের আস্থা অর্জন, মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় কর্মী, সংগঠন তৈরি করা এ সবই হবে নতুন জোটের মৌলিক চ্যালেঞ্জ।