স্বপ্নের দেশ ইউরোপে পৌঁছানোর আশায় লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবির ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈর ও শিবচরের দুই যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। এক মাস ধরে তাদের কোনো খোঁজ না পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে দালালচক্রের মাধ্যমে আসে নৌকাডুবির খবর। এ ঘটনায় দুই এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজৈর উপজেলার আমগ্রাম পশ্চিম তেলিকান্দির ছামির শেখ (২০) নিখোঁজদের একজন। ১৫ নভেম্বর লিবিয়া উপকূলে নৌকাডুবির পর থেকেই তার কোনো সন্ধান নেই। একই গ্রুপে থাকা লিবিয়া থেকে ফেরা জামাল সর্দার জানান, সাগর পাড়ি দেওয়ার সময়ই ছামির নিখোঁজ হন।
পরিবারের সদস্যরা জানান, গোপালগঞ্জের ছাগলছিড়া এলাকার দালাল ইলিয়াসের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকার চুক্তিতে ইতালি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে ১৬ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়ার পর ছামিরকে লিবিয়া পাঠানো হয়। ‘গেম’ দেওয়ার আগের দিন ছামির তার মাকে শেষবার বলেছিলেন, “মা, ৩০ ঘণ্টা যোগাযোগ করতে পারব না। দোয়া করবেন।” এরপর থেকে ফোন বন্ধ। ছেলের খোঁজ না পেয়ে বিধ্বস্ত মা সুফিয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “ফেরত আনেন, না হয় পৌঁছে দেন। আমার ছেলের কোনো খোঁজ নাই।”
এদিকে শিবচরের বহেরাতলা দক্ষিণ ইউনিয়নের নিশাত মাতুব্বরসহ অন্তত তিন যুবক একই নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হয়েছেন বলে জানায় স্থানীয়রা। নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন বাঁশকান্দির ফারহান খান রোমান (২৪), শেখপুরের মুন্না এবং শিবচর পৌরসভার আরও একজন যুবক।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দালাল কুদ্দুস পরিবারগুলোকে জানান যে ইতালি যাওয়ার পথে যাত্রীবোঝাই ট্রলারটি ডুবে গেছে এবং বেশির ভাগই নিখোঁজ।
শনিবার সকালে সরেজমিনে গেলে নিশাতের বাড়িতে দেখা যায় স্বজনদের আহাজারি। ৬ মাসের সন্তানকে কোলে নিয়ে নির্বাকভাবে বসে আছেন তার স্ত্রী মেহেনাজ। আর মা সাবিনা বেগম বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
পরিবার জানায়, স্থানীয় কুদ্দুসের মাধ্যমে ২২ লাখ টাকায় অক্টোবরের শুরুতে মিশর হয়ে লিবিয়া যান নিশাত। ১০ নভেম্বর ‘গেম’ দেওয়ার পর থেকেই তার ফোন বন্ধ। এক মাস যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর বৃহস্পতিবার আসে নৌকাডুবির দুঃসংবাদ।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, “পরিবার যদি আইনগত সহায়তা চায়, প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।”
শিবচর থানার ওসি রকিবুল ইসলাম জানান, “এ ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিডি প্রতিদিন/হিমেল