জুতার আঠা, ফিটকিরি, নিম্নমানের চিটাগুড় (গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত), নিষিদ্ধ হাইড্রোজ, নন-ফুডগ্রেড রং ক্ষতিকর রং ও ফ্লেভার, পচা মিষ্টি, মিষ্টির নষ্ট গাদ, ময়দা, সোডাসহ নানা বিষাক্ত উপাদান দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মণকে মণ ভেজাল খেজুর ও আখের গুড়। ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে এসব ভেজাল গুড়।
দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র এ ভেজাল গুড় তৈরি করে আসলেও রহস্যজনক কারণে তারা ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। অবশেষে ভেজাল গুড় তৈরির কারখানায় হানা দিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল গুড়, গুড় তৈরির সরঞ্জাম ও উপকরণ জব্দ করেছে জেলা প্রশাসন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহরতলির মাচ্চর ইউনিয়নের শিবরামপুরের ছোট বটতলা নামক স্থানে স্বপন কুমার শীল গড়ে তোলেন বিশাল একটি ভেজাল গুড়ের কারখানা। চারদিকে উঁচু টিনের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এবং একাধিক সিসি ক্যামেরা লাগানো অত্যন্ত নোংরা ও স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কারখানাটিতে রাতদিন চলত ভেজাল গুড় উৎপাদন। প্রতিদিন রাতের আঁধারে ট্রাকে করে আনা হতো ভারতীয় নিম্নমানের চিটাগুড়। প্রতিদিন টনকে টন ভেজাল গুড় উৎপাদন হতো এ কারখানায়। এসব গুড় ঢাকা, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হতো। বাজারে খেজুরের রস পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে খেজুরের গুড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কারখানাটিতে ভেজাল গুড় উৎপাদন করা হলেও প্রশাসনের কেউ এসে দেখেনি। কারখানার মালিক স্বপন কুমার শীল প্রভাবশালী একটি মহলকে ম্যানেজ করেই দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্মটি করে আসছিল। স্থানীয়দের কখনো ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হতো না। সিসি ক্যামেরা দিয়ে সব সময় নজরদারি করা হতো। বিভিন্ন সময় কারখানাটিতে ভেজাল গুড় উৎপাদন করার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই ছড়িয়ে দিলেও রহস্যজনক কারণে কারখানাটিতে অভিযান চালায়নি প্রশাসন।
সম্প্রতি ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছে এমন অভিযোগের দাবি জোরালো হয়। গত মঙ্গলবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. আতিকুর রহমানের নেতৃত্বে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা কারখানাটিতে অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানের খবর পেয়ে কারখানার মালিক স্বপন কুমার শীল ও কর্মচারীরা পালিয়ে যায়। পরে কারখানার ভেতরে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে সাড়ে ৬ হাজার কেজি ভেজাল গুড়, গুড় তৈরির উপকরণ ও সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরে জব্দকৃত ভেজাল গুড় ধ্বংস করা হয়। ভেজাল গুড় তৈরির অভিযোগে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়।
কারখানা মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। অভিযানের সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. আতিকুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা আজমল ফুয়াদ, জেলা ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান, জেলা নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক বজলুর রশিদ।
স্থানীয়রা জানান, ভেজাল গুড় তৈরির হোতা স্বপন কুমার শীল প্রভাবশালী হওয়ায় সে সব সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। এ ধরনের জঘন্য কাজের জন্য তার উপযুক্ত শাস্তি হওয়া দরকার।
সহকারী কমিশনার মো. আতিকুর রহমান জানান, অভিযানের সময় কারখানায় টিনজাত চিটাগুড়ের সঙ্গে নিষিদ্ধ হাইড্রোজ, ফিটকিরিসহ ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে চিনি ব্যবহার করে ভেজাল গুড় তৈরি হচ্ছিল। সাড়ে ৬ হাজার কেজি গুড় ও রাসায়নিক ধ্বংস করা হয়েছে। একইসঙ্গে কারখানাটি সিলগালা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, মালিককে না পাওয়ায় তাকে আসামি করে নিরাপদ খাদ্য আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/কেএইচটি