বাংলাদেশের ডিজিটাল আর্থিক খাতের দীর্ঘদিনের বিচ্ছিন্নতা দূর করে সব ধরনের আর্থিক লেনদেনকে এক প্ল্যাটফর্মে আনার প্রস্তুতি শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক, মোবাইলে আর্থিক সেবা, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, ই-ওয়ালেট, বিমা ও অন্যান্য আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংযুক্ত করা হবে একক ডিজিটাল গেটওয়েতে। প্রযুক্তিভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক তাৎক্ষণিক পরিশোধ ব্যবস্থা ‘মোজালুপ’ চালুর মাধ্যমে ২০২৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে দেশের পুরো ডিজিটাল পেমেন্ট অবকাঠামোকে নতুন রূপে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
অন্তর্ভুক্তিমূলক তাৎক্ষণিক পরিশোধ ব্যবস্থা (আইআইপিএস) চালু হলে দেশের আর্থিক খাতে প্রথমবারের মতো ব্যাংক থেকে ওয়ালেট, ওয়ালেট থেকে ব্যাংক, ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান, এমনকি প্রতিষ্ঠানভিত্তিক অর্থ বিতরণও সম্পন্ন হবে একীভূত ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থায়।
ব্যবহারকারীরা কিউআর কোড বা ভার্চুয়াল আইডি ব্যবহার করে যে কোনো বিক্রেতাকে সহজে ও দ্রুত অর্থ প্রদান করতে পারবেন। এতে আর নগদ উত্তোলন বা বিভিন্ন নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতার ঝামেলা থাকবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, আইআইপিএস কেবল প্রযুক্তিগত উদ্যোগ নয়, এটি দেশের আর্থিক ব্যবস্থার কাঠামোগত সংস্কার। তিনি বলেন, সব লাইসেন্সধারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত করা হবে, যাতে আর্থিক সেবায় পূর্ণাঙ্গ আন্তসংযোগ নিশ্চিত করা যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগের আন্তপরিচালন উদ্যোগগুলো সীমিত অংশগ্রহণের কারণে সফল হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমাদের পুরো লেনদেন ব্যবস্থা ক্যাশলেসে রূপান্তর করতে হবে। আইআইপিএস চালু হলে স্বচ্ছতা বাড়বে, অনানুষ্ঠানিক অর্থপ্রবাহ কমবে এবং রাজস্ব আদায় আরও শক্তিশালী হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে লেনদেন হবে দ্রুত, নিরাপদ ও কম খরচে। নগদ লেনদেনের ওপর নির্ভরতা কমবে। ব্যবসায়ীরা যে কোনো ব্যাংক ওয়ালেট, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের কাছ থেকে সহজে পেমেন্ট নিতে পারবেন। সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য কমপ্লায়েন্স ও সংযোগ প্রক্রিয়া সহজ হবে। রেমিট্যান্স থেকে দোকানদারের কিউআর সবকিছুই থাকবে অন্তর্ভুক্তিমূলক তাৎক্ষণিক পরিশোধ ব্যবস্থায়। নতুন সিস্টেমে নিম্নলিখিত সব ধরনের লেনদেন একীভূত হবে। আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় রেমিট্যান্স, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি অর্থ স্থানান্তর, কিউআর কোড পেমেন্ট, ভার্চুয়াল আইডিভিত্তিক ট্রান্সফার, মার্চেন্ট পেমেন্ট, প্রাতিষ্ঠানিক ভাতা, অনুদান, বেতন বিতরণ করা যাবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, গ্রাম শহর যেখানেই হোক, ব্যবহারকারীরা এক অ্যাপ বা যে কোনো সংযুক্ত সেবা থেকে নির্বিঘ্নে অর্থ পাঠাতে, গ্রহণ করতে বা পেমেন্ট দিতে পারবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৭ সালের মাঝামাঝি আইআইপিএস চালু হলে এটি দেশের পেমেন্ট অবকাঠামোর সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হবে। তিনি বলেন, মোজালুপভিত্তিক এই প্ল্যাটফর্ম সব আর্থিক অংশগ্রহণকারীকে এক ডিজিটাল নেটওয়ার্কে যুক্ত করবে। যা জাতীয় পর্যায়ে তাৎক্ষণিক, নিরাপদ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক লেনদেন নিশ্চিত করবে।