আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এখন বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত শক্তি। কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়াতে এআই কার্যকর টুল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এআই কোনো জনশক্তির চাকরি কেড়ে নেবে না, বরং যারা এ প্রযুক্তির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবেন না তারাই চাকরির ঝুঁকিতে পড়বেন।
শুক্রবার রাজধানীর শেরাটন হোটেলে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ হিউম্যান রিসোর্স অর্গানাইজেশন্স (এফবিএইচআরও)-এর আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো সপ্তম জাতীয় মানবসম্পদ সম্মেলন। এতে আলোচকরা এসব বিষয় তুলে ধরেন।
দেশের শীর্ষ উদ্যোক্তা, সিইও, মানবসম্পদ বিশেষজ্ঞ, শিল্প নেতৃত্ব ও কর্পোরেট সিদ্ধান্তগ্রহণকারীরা সম্মেলনে অংশ নেন। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল- এআই ও ডিজিটাল উদ্ভাবনের যুগে বাংলাদেশের এইচআর পেশাজীবী এবং ব্যবসায়িক নেতৃত্বকে ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত করা, শিল্পখাতের বাস্তব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং নীতি ও প্রয়োগে কার্যকর সুপারিশ তৈরি করা।
দিনব্যাপী আয়োজনে ৬টি লার্নিং সেশন, দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের কী-নোট প্রেজেন্টেশন এবং ৪টি উচ্চপর্যায়ের প্যানেল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় ভবিষ্যতের এআইচালিত কর্মক্ষেত্র, ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট, নেতৃত্ব বিকাশ, কর্মী সক্ষমতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন, অটোমেশনের চ্যালেঞ্জসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়- কিভাবে এআই ব্যবহারের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তিকে আরও এগিয়ে নেওয়া যায়।
স্বাগত বক্তব্য দেন কনভেনশন চেয়ার মো. কামরুজ্জামান সবুজ। এছাড়া বক্তব্য দেন FBHRO প্রেসিডেন্ট ড. মো. মোশাররফ হোসেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. ফরিদ এ. সোবহানি, SLSD-এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট প্রফেসর মইনুদ্দিন চৌধুরী এবং কনভেনশন সেক্রেটারি ড. খদিজা রহমান তানসিসহ আরও অনেকে।
সোসাইটি ফর হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের প্রধান ও সিইও জনি সি. টেইলর আলোচনায় বলেন, দক্ষ মানবসম্পদের জন্য এআই কোনো হুমকি নয়। বরং দ্রুত পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে এআই এখন সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার। তার মতে, এআই ছাড়া ভবিষ্যতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, এআই অসাধারণ একটি প্রযুক্তি। মেশিন প্রচুর তথ্য তৈরি করে কিন্তু সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে দ্রুত সমস্যা সমাধান করতে পারে এআই। তাই দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও দক্ষ অপারেশন পরিচালনায় এ প্রযুক্তি অপরিহার্য। শুধু সমস্যা সমাধান নয়, কৌশলগত চিন্তাভাবনার বিকাশেও এআই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই এআই ব্যবহারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এআই সাংগঠনিক ‘অ্যাজিলিটি’ অর্থাৎ দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বাড়ায়। বর্তমান সময়ের অনিশ্চয়তা ও ঘন ঘন পরিবর্তনের যুগে এই অ্যাজিলিটি প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা ও সফলতার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
সম্মেলনে আলোচকরা আরও বলেন, বাংলাদেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, শিল্পোন্নয়ন এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে সবচেয়ে বড় শক্তি হলো দক্ষ মানবসম্পদ। প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক কর্মপরিবেশে সক্ষম জনশক্তি তৈরি এখন জাতীয় স্বার্থের অন্যতম অগ্রাধিকার। এ লক্ষ্যেই দেশের মানবসম্পদ খাতে সমন্বিত নেতৃত্ব দিচ্ছে এফবিএইচআরও।
উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে ৬টি ক্যাটাগরিতে বেস্ট এইচআর প্র্যাকটিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয় ইউনিলিভার, রবি, শেরাটন, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং প্রান-আরএফএল গ্রুপকে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ