নামে নিউ হোস্টেল, বাস্তবে তা জঙ্গল! কুমিল্লা নগরীর টমছম ব্রিজ এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ছাত্রাবাস নিউ হোস্টেল। ছাত্রাবাসটির উল্লেখযোগ্য অংশ এক যুগের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যেখানে সাড়ে চারশ’ ছাত্র থাকতেন, সেখানে এখন রয়েছেন ৮০ জন। দূর থেকে আসা শিক্ষার্থীদের দাবি তাদের আবাসন সংকট দূর করতে হোস্টেলটি পুনঃনির্মাণ জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলেজ প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সূত্র জানায়, ১৮৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর রায় বাহাদুর আনন্দ চন্দ্র রায় ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। ১২৬ বছর বয়সী কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার। এই কলেজের শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থার জন্য গড়ে তোলা হয় ডিগ্রি শাখার ক্যাম্পাসে নজরুল হল, ফয়জুন্নেছা হল, চর্থায় মহিলা কলেজের পাশে শেরে বাংলা হল ও টমছম ব্রিজ এলাকায় সোহরাওয়ার্দ্দী হল তথা নিউ হোস্টেল। চারটি হোস্টেলে এখন ছেলে ও মেয়ে মিলে ১২০০ জন থাকতে পারেন। হোস্টেল গুলোর মধ্যে বেশি বেহাল অবস্থা নিউ হোস্টেলের। সেখানে আগে সাড়ে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারতেন, এখন আছেন ৮০ জন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, টমছম ব্রিজ কবরস্থান লাগোয়া নিউ হোস্টেল। এর চারপাশে শহরের আভিজাত্যের প্রদর্শনী দেখা গেলেও নিউ হোস্টেল এখন জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত এলাকা। লতাপাতায় ঢেকে গেছে শত বছরের ঐতিহ্য। একটি পুকুরের চার পাড়ে নিউ হোস্টেল ছিল। তিনটি ২০০০ সালের পরে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ২০১৩ সালের দিকে সেগুলো বন্ধ হয় যায়। পশ্চিমপাড়েরটি ভবন ভেঙে পড়েছে, সেখানে লতাপাতা আর পরগাছা চারপাশ দখল করেছে। পূর্ব পাড়ের ভবনের তেমন কিছু নেই। উত্তরপাড়ের ভবন এখনও কোনো রকমে টিকে আছে। তার ভেতরে বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। পাশে ভ্রাম্যমাণ মানুষ সেখানে শৌচাগার বানিয়েছে। উত্তরপাড়ের ভবনের গায়ে লেখা পিডব্লিউ ১৯৪৭। দক্ষিণ পাড়ের ভবটির ৯০ দশকের। সেটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীরা থাকছেন। সেই ভবনটির অবস্থাও ভালো নয়।
নিউ হোস্টেলের সাবেক শিক্ষার্থী জাহাঙ্গীর আলম টিপু বলেন, আমার বাড়ি চাঁদপুরে। হোস্টেলে সুযোগ না পেলে আমাদের লেখাপড়া কঠিন হয়ে যেত। ১৯৮৬-৮৭ সালে সেখানে ছিলাম। সেই দিনের স্মৃতি এখনও খুব মনে পড়ে। একবার মাছ ধরতে সবাই ভোর বেলায় পুকুরে নেমে পড়ি। সেগুলো কেটে রান্না করে খেয়েছি, অনেক মজা করেছি। আমাদের রান্না করতেন মন্ত্রী নামের এক ব্যক্তি। সেই সময়ের বন্ধুদের খুব মিস করি। হোস্টেলটির এখন বেহাল দশা। এটি পুনঃনির্মাণ করা হোক।
শিক্ষার্থী আরাফাত হোসেন জিহাদ, মো. রহমত উল্লাহ ও হাসান আল কবির বলেন, দূরের শিক্ষার্থীরা যাতায়াতে পড়ার এনার্জি হারিয়ে ফেলেন। হোস্টেলে সিট পেলে তাদের পড়ার মান বাড়বে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা অনেকে মেস ও লজিংয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এদিকে ভিক্টোরিয়া কলেজ দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকটে ভুগছে। আমরা চাই আবাসন সংকট দূর করে নিউ হোস্টেল পুনঃনির্মাণ করা হোক।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল বাসার ভুঁঞা বলেন, আবাসন সংকটের বিষয়টি আমাদের নলেজে রয়েছে। নিউ হোস্টেল ও নজরুল হল এলাকায় দুইটি ১০তলা ভবনের জন্য আমরা আবেদন জানিয়েছি। সেগুলো পাশ হলে আরো ২৪০০ শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত