জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলমান ১৪’শ ৪৫ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজের নথিপত্র দেওয়ার দাবিতে প্রকল্প কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ- জাকসু ও ৬টি হল সংসদের শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা।
সোমবার (১লা ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে জাকসুর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হোসনী মোবারক এবং কার্যকরী সদস্য মোহাম্মদ আলী চিশতীর নেতৃত্বে নবনির্মিত ৬ টি আবাসিক হল ছাত্র সংসদের প্রতিনিধিরা তালা লাগিয়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। এদিন সন্ধ্যা ৬ টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা জানান, বিশ্ববিদযালয়ে চলমান ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে নবনির্মিত ১০ তলাবিশিষ্ট ৬টি আবাসিক হলে ব্যাপক দুর্নীতি এবং অনিয়ম হয়েছে। যার কারণে সম্প্রতি অনুভূত হওয়া ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে নতুন হলগুলোর ফ্লোরসহ বিভিন্ন দেওয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। তারা প্রকল্প কার্যালয় থেকে নির্মিত এসব হলের নির্মাণকাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খরচের নথিপত্র দেখতে চান। যা তারা নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর অধীনে যাচাই-বাছাই করতে চান বলে জানিয়েছেন। এরজন্য তারা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হওয়া চুক্তিপত্র, স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, অথরিটি এপ্রোভাল শীট, ডিপিপি, প্রজেক্টের শিডিউল, মাটি পরীক্ষার প্রমাণপত্র, ব্যয়ের প্রমাণপত্র, টেন্ডার, মেজারমেন্ট বুক, তদারকি সংক্রান্ত তথ্যসহ সংশ্লিষ্ট নথিপত্রের কপি দেওয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে জাকসুর স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক হোসনী মোবারক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময়ে জেনেছি যে জাবিতে চলমান অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। যা কিছুদিন আগে অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের সময় আমাদেরকে পুনরায় ভাবিয়ে তুলেছে। ভূমিকম্পের পর থেকে আমরা নতুন হলগুলোর শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিন পার করছি। এর আগে প্রশাসনের কাছে আমরা প্রকল্পের সকল কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য শ্বেতপত্র উন্মোচনের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি। এখন আমরা প্রকল্পের নির্মাণ কাজের সকল নথিপত্র চেয়েছি। এখানে আমরা ৬ টি নতুন আবাসিক হলের শিক্ষার্থী প্রতিনিধি রয়েছি। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক সেটা দিতে চাচ্ছে না। যার কারণে আমরা তালা লাগিয়ে দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। প্রশাসন যতদিন পর্যন্ত প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নির্মাণ কাজের যাবতীয় ডকুমেন্টস সরবরাহ না করবে আমরা প্রকল্প কার্যালয়ের তালা খুলবো না।”
তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, “জাকসু ও হল সংসদের প্রতিনিধিরা প্রকল্পের নির্মাণকাজের বিভিন্ন চুক্তিপত্র ও ডকুমেন্টস চাচ্ছে। তারা চাইলেই তো সেগুলো আমি তাদেরকে দিতে পারি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাকে যা করতে বলবে আমি তাই করবো। উপাচার্য স্যার আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। এরপর আমরা সিদ্ধান্ত জানাবো।”
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল