আগামী গ্রীষ্মে নানা রঙে রঙিন হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডা। বিশ্বকাপের ২৩ নম্বর আসর হবে এ তিন দেশে। ৪৮টি পতাকার রঙে চকমক করে উঠবে বিশ্বকাপের মঞ্চ। স্বাগতিক তিন দেশসহ ৪২টি দল নিশ্চিত হয়ে গেছে। বাকি ছয়টি দল নিশ্চিত হবে আগামী মার্চে, প্লে-অফ পর্ব থেকে। এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসির কেনেডি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বকাপ গ্রুপ পর্বের ড্র। কেমন হলো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব? ফেবারিটদের সামনে কতটা কঠিন প্রতিপক্ষ অপেক্ষা করছে?
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার সামনে সহজ প্রতিপক্ষ। ‘জে’ গ্রুপে লিওনেল মেসিরা খেলবেন আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া ও জর্ডানের বিপক্ষে। আলজেরিয়া ও অস্ট্রিয়ার কাছে কখনোই হারেনি আর্জেন্টিনা। জর্ডানের বিপক্ষে খেলাই হয়নি আলবেসিলেস্তদের। গ্রুপ পর্ব সহজ হলেও নকআউট পর্ব বেশ কঠিন হতে যাচ্ছে আর্জেন্টিনার। কোয়ার্টার ফাইনালেই দেখা হতে পারে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোদের নিয়ে গড়া পর্তুগালের সঙ্গে। বিশ্বকাপে স্বপ্নের এ লড়াই দেখার জন্য মেসি-রোনালদো ভক্তরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবেন। তবে দুই তারকার একজনকে বিদায় নিতে হবে সেমিফাইনালের আগেই। এরপর আরও বড় চমক দেখতে পারেন ফুটবলপ্রেমীরা। ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা নিজেদের গ্রুপে সেরা হলে এবং নকআউটের বাধা পাড়ি দিয়ে সেমিফাইনাল খেললেই ঘটবে বহু কাঙ্ক্ষিত সেই ঘটনা। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই হয়ে যাবে ‘সুপারক্ল্যাসিকো’ খ্যাত ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা লড়াই। ব্রাজিলের সমর্থকরা এবার বেশ নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ‘সি’ গ্রুপে সিলেকাওদের সঙ্গে আছে মরক্কো, হাইতি ও স্কটল্যান্ড। নকআউট পর্বের শুরুর দিকেও খুব বড় বাধা নেই কার্লো আনচেলত্তির দলটির সামনে। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখা হতে পারে ইংল্যান্ডের সঙ্গে। এই বাধা পাড়ি দিলেই বহু কাঙ্ক্ষিত ‘সুপারক্ল্যাসিকো’!
বিশ্বকাপে সবচেয়ে সহজ গ্রুপ ধরা হচ্ছে স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের গ্রুপকে। ‘ডি’ গ্রুপে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আছে প্যারাগুয়ে এবং অস্ট্রেলিয়া। দুটি দলই যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেকটা পিছিয়ে আছে। উয়েফা প্লে-অফ ‘সি’ থেকে তুরস্ক আসতে পারে এই গ্রুপে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গ্রুপ পর্ব পাড়ি দেওয়াটা বেশ সহজ হয়ে গেল! সবচেয়ে কঠিন গ্রুপে (গ্রুপ অব ডেথ) লড়াই করতে হবে গতবারের রানার্সআপ ফ্রান্সকে! ‘ধাই’ গ্রুপে ফরাসিরা খেলবে সেনেগাল ও নরওয়ের সঙ্গে। এ ছাড়া এই গ্রুপে প্লে-অফ খেলে আসতে পারে ইরাক। ফরাসিরা সেনেগালের কাছে ২০০২ বিশ্বকাপে হেরেছিল। নরওয়ের সঙ্গেও পা ফসকাতে পারে কিলিয়ান এমবাপ্পেদের। আরলিং হলান্ডকে রুখতে পারে, এমন ডিফেন্স বর্তমান সময়ে খুব কমই আছে। তিনি আক্ষরিক অর্থেই ‘গোল মেশিনে’ পরিণত হয়েছেন। নরওয়ের জার্সিতে মাত্র ৪৮ ম্যাচ খেলেই করেছেন ৫৫ গোল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ডটা বুলেটের গতিতেই তাড়া করছেন তিনি! ফ্রান্স ছাড়া বাকি ফেবারিটদের গ্রুপ পর্বের লড়াই বেশ সহজই হতে পারে। অবশ্য ইংল্যান্ডের সামনেও বাধা হিসেবে ঘানা আছে। এল গ্রুপে ইংল্যান্ডকে লড়তে হবে ক্রোয়েশিয়া, ঘানা এবং পানামার সঙ্গে। এই গ্রুপ থেকে শীর্ষস্থান দখল করা কঠিন হবে ইংল্যান্ডের। ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরেই ২০১৮ বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলা হয়নি ইংলিশদের। সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। আফ্রিকার ‘ব্ল্যাক স্টার’ খ্যাত ঘানাও কম বিপজ্জনক নয়।
ফেবারিট দলগুলোর মধ্যে স্পেনের গ্রুপে (এইচ) কেপ ভার্দে, সৌদি আরব ও উরুগুয়ে। স্প্যানিশরাও সহজেই গ্রুপ পর্বের বাধা পাড়ি দিতে পারে। এবারের বিশ্বকাপে শীর্ষ ফেবারিট হিসেবেই খেলবে লামিনে ইয়ামাল-রদ্রিদের নিয়ে গড়া স্পেন। আরেক ফেবারিট জার্মানি ‘ই’ গ্রুপে খেলবে আইভরি কোস্ট, ইকুয়েডর ও কুরাকাওয়ের সঙ্গে। জার্মানদের জন্যও গ্রুপ পর্বের লড়াই বেশ সহজ।