পেশাদার ফুটবল লিগ চলছে। এগিয়ে চলেছে জনপ্রিয় আসর ফেডারেশন কাপও। চলতি মৌসুমে স্বাধীনতা কাপের সঙ্গে সুপার কাপও মাঠে গড়ানোর কথা। এখন দেশের ফুটবলে সবচেয়ে মর্যাদাকর আসর পেশাদার লিগই যদি থেমে যায়, তাহলে অন্য আসরগুলো হবে কীভাবে? দিন যত এগোচ্ছে ততই এ নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। ১০ ক্লাবের চারটি করে মাচ শেষ হয়েছে লিগে। আগামীকাল থেকে পঞ্চম রাউন্ড শুরু হবে। ক্লাবগুলো ভয়াবহ অর্থ সংকটে বন্দি। খেলোয়াড়দের পেমেন্ট দিতে পারছে না। লিগে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন মোহামেডানের বেহাল দশা তো সবারই জানা। পারিশ্রমিকের অর্থ বুঝে পাচ্ছেন না ফুটবলাররা। বিদেশি ফুটবলাররা হুমকি দিয়ে রেখেছেন অর্থ না পাওয়ায় যে কোনো সময়ে ফিফার কাছে নালিশ করবেন তারা। কোচিং স্টাফরাও বেতন পাচ্ছেন না। টাকা পাবেন সেই লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। তাই ফুটবলাররা বিদ্রোহ ঘোষণা করে লিগ বয়কট করতে পারেন।
মোহামেডান বড় ক্লাব বলে তাদের সংকটটা প্রকাশ্যে এসেছে। তা ছাড়া ফুটবল দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ নিয়ে মিডিয়ার সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ছাইদ হাসান কানন ও ইমতিয়াজ আহমেদ নকিব বলেছেন, অর্থ না পেলে খেলোয়াড়রা খেলবেন কীভাবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকবেনই বা কীভাবে? ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির সংকট নতুন নয়। কিন্তু অন্যান্যবার ধীর গতিতে হলেও পেমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এবার তো তাও নেই।
সংকটে বন্দি ক্লাবগুলো
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তাদের অনেক কর্মকর্তা দেশ ছাড়া কেউ বা আবার জেলে বন্দি। এমন অবস্থায় দু-তিন ব্যবসায়ী সহযোগিতা করলেও এখন নাকি বেঁকে বসেছেন। তাদের কথা ব্যবসা মন্দা অবস্থায় টাকা দেওয়া সম্ভব নয়
এতটা সংকটাপন্ন অবস্থা যে, ক্লাবে নাকি ঠিকমতো রান্নাও চড়ে না। এমন বিপদের মধ্যে আবার ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন। তিনি পরিচালক পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছেন। ক্লাবের সঙ্গে সম্পর্কই ছিন্ন করেছেন। অথচ আলমগীরই কয়েক বছর ধরে ফুটবলের মূল অর্থটা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পদত্যাগ করায় মোহামেডান এখন অনেকটায় অন্ধকারে বন্দি। খেলোয়াড়দের বলা হচ্ছে তোমরা খেলবে কি না তা তোমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু পেমেন্টের ব্যাপারে কিছু বলার নেই। এখন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা যদি এমন কথা বলেন, তাহলে খেলবেন কোন ভরসায়? মোহামেডানের এখন যে অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের আগে কমিটি হবে না। কেননা অনেকে নিশ্চিত বিশেষ এক রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় আসবে তখন ক্লাবের সব সমস্যা কেটে যাবে। তার আগে যে ক্লাব শেষ হয়ে যাচ্ছে সে খবর কেউ কি রাখেন না?
মোহামেডানের অর্থ সংকট ক্লাব কর্মকর্তারা স্বীকার করছেন বলে যত আলোচনা। অন্যান্য ক্লাবেরও যে বেহাল দশা তা তো আর প্রকাশ হচ্ছে না। লিগে ১০ দলের মধ্যে অন্তত ছয় ক্লাব নাকি ভয়ানক অর্থ সংকটে বন্দি। তাদের খেলোয়াড়রাও টাকা না পেয়ে লিগ বর্জনের হুমকি দিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে আরেক বড় ক্লাবের কথা না বললে নয়। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তাদের অনেক কর্মকর্তা দেশ ছাড়া কেউ বা আবার জেলে বন্দি। এমন অবস্থায় দু-তিন ব্যবসায়ী সহযোগিতা করলেও এখন নাকি বেঁকে বসেছেন। তাদের কথা ব্যবসা মন্দা অবস্থায় টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। তিন বিদেশি ফুটবলার তো চলে যেতে চাচ্ছেন। স্থানীয়রা হুমকি দিয়ে রেখেছেন এভাবে তাদের আর খেলা সম্ভব নয়। এমন সংকটাপন্ন অবস্থায় ৪/৫টি ক্লাব লিগ থেকে যদি সরে দাঁড়ায় তাহলে অবস্থা কী হবে? ন্যায্য টাকা না পেলে খেলোয়াড়রা তো যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমন পরিস্থিতির কথা বাফুফের কি জানা নেই? তাদের কাছ থেকে ক্লাবগুলো বড় অঙ্কের টাকা পাবে। তা মিটিয়ে আপাতত সমস্যার সমাধান কি করা যায় না?