বরাবরই কম কথা বলেন লিটন দাস। মিডিয়া বিমুখ বললে অত্যুক্তি হবে না। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের উত্তর দেন শীতল কণ্ঠে। চট্টগ্রামে গতকাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন বিসিবি ও নির্বাচক প্যানেলকে। হঠাৎ এত ক্ষুব্ধ হলেন কেন বাংলাদেশ টি-২০ অধিনায়ক লিটন? আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-২০ সিরিজ আজ শুরু হচ্ছে চট্টগ্রামে। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে ম্যাচ। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বেশ সাবলীল উত্তর দিচ্ছিলেন টাইগার অধিনায়ক। শামীম হোসেন পাটোয়ারীর বাদ পড়ার বিষয়ে উত্তর দিতে গিয়ে হঠাৎ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শামীম ছন্দে নেই। সর্বশেষ তিন টি-২০ ম্যাচে তার স্কোর ০, ১ ও ১ রান। শামীমকে কেন বাদ দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তরে লিটন বলেন তিনি জানেন না, ‘শামীম থাকলে অবশ্যই ভালো হতো। ইটস নট মাই কল, টোটালি সিলেক্টরস কল। আমি জানি না কেন, তবে নির্বাচকরা আমাকে কোনো কিছু নোটিস করা ছাড়াই শামীমকে বাদ দিয়ে দিয়েছে দল থেকে। উইদাউট অ্যানি নোটিস। আমি এতদিন জানতাম যে, একটা দল যখন কেউ হ্যান্ডল করে অন্তত অধিনায়ক জানে কোন ক্রিকেটার কখন দলে আসবে, কখন বাইরে যাবে।’ সংবাদ সম্মেলনে বিস্ফোরণ ঘটানোর পর এখন ক্রিকেটপাড়ায় জোর আলোচনা টি-২০ বিশ্বকাপে লিটন অধিনায়ক থাকবেন কি? লিটন নিজেই বলেন, ‘বিশ্বকাপ পর্যন্ত আমি (অধিনায়ক) থাকি কি না, দেখেন।’
টাইগার অধিনায়ক সমালোচনা করেন অধিনায়ক হিসেবে দল নির্বাচনে তার কোনো মতামত না নেওয়ায়। শুধু এবারই প্রথম নয়, বরাবরই দল নির্বাচনে অধিনায়কদের মতামতকে গুরুত্ব কম দেওয়া হয়। পারলে উপেক্ষাও করা হয়। এবার লিটন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দল নির্বাচনের বিষয়ে তিনি জানেন না। শুধু তাই নয়, তাকে যে দল দেওয়া হবে, সেটা নিয়েই কাজ করতে বলা হয়েছে। বিসিবির এ
সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি টাইগার অধিনায়ক, ‘আমাকে পুরোপুরি বলা হয়েছে নির্বাচক প্যানেল ও বোর্ড থেকে। আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, সেই দলটা নিয়েই কাজ করতে হবে। এখানে আমার বলার কিছু থাকবে না যে, আমি কোন ক্রিকেটারকে চাই, কাকে চাই না। আমি এতদিন জানতাম, একটা মানুষ যখন অধিনায়ক, তার একটা দল গোছানোর পরিকল্পনা থাকে। সম্প্রতি কয়েক দিন থেকে জানতে পারলাম, যে দলটা আমাকে দেওয়া হবে, আমার কাজ হচ্ছে সেই দলটাকে নিয়েই মাঠে ভালো কিছু দেওয়া।’ এর আগেও বিসিবি ও নির্বাচক প্যানেলের দল নির্বাচন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন সাকিব আল হাসান। দল নির্বাচন নিয়ে প্রত্যেক অধিনায়কই বিরক্ত হন। কিন্তু কোড অব কন্ডাক্টের জন্য কিছু বলেন না। এবার নিজেকে সংযত রাখতে পারেননি লিটন। সমালোচনার ঝাঁপি খুলে সমালোচনা করেছেন নির্বাচক প্যানেলকে।
অধিনায়কের মতামত নিয়ে দল গঠন হয়নি। নির্বাচক প্যানেল তাকে স্কোয়াড গঠনের শুরুতে জানায়নি, এটা তাকে ক্ষুব্ধ করলেও বিষয়টি তার জন্য অপমানজনক কি না সে প্রসঙ্গে বলেন, ‘অপমানজনক বলব না। তবে আমার মনে হয়, দল গঠনের বিষয়টি কোচ এবং অধিনায়কের জানা উচিত। সেই জায়গা থেকে আমরা কিছুই জানি না। যদি বিশ্বকাপেও একই জিনিস ঘটে, আমাকে যে দলটা দেওয়া হবে, আমি সেই দল থেকেই চেষ্টা করব একাদশ খেলানোর।’ অপমানজনক মনে না করলেও হতাশা ফুটে উঠেছে কণ্ঠে। প্রয়োজনের সময় নিজেকে ক্রিকেটারদের পাশে আত্মবিশ্বাসের ছায়া হয়ে দাঁড়াতে না পারায় হতাশ টাইগার অধিনায়ক লিটন, ‘এ ঘটনা দলকে হয়তো ডিস্টার্ব করবে না। তবে এটা হতাশাজনক। আপনি প্রত্যেক ক্রিকেটারের কাছে প্রতি সিরিজে পারফরম্যান্স আশা করতে পারবেন না। আমরা চেষ্টা করেছি এতদিন ধরে দলটা গোছানোর জন্য। শামীম কিন্তু দু-তিনটা সিরিজে খুব ভালো অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছে, যেটা আমাদের দরকার ছিল। সে ক্ষেত্রে বাদ পড়াটা শামীমের জন্য হতাশাজনক। অধিনায়ক হিসেবে আমি সরি। আর কিছুই বলতে পারব না তাকে। কারণ আমি কখনোই আশা করি না, ১৫ ক্রিকেটার প্রতিদিনই পারফর্ম করে দেবে। দু-তিনটা সিরিজে যখন পারফর্ম করবে না, তার পাশে আমার থাকা উচিত। আমি সত্যিই সরি যে, আমি তাকে ব্যাক করতে পারিনি।’