ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় ‘মক ভোটিং’ আয়োজন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আয়োজিত মক ভোটিংয়ে (মহড়া) অব্যবস্থাপনা দেখে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
শুধু তাই নয় কেন্দ্রের ‘হ-য-ব-র-ল’ অবস্থা দেখে তিনি চলমান প্রক্রিয়া থামিয়ে দিয়ে নিজের তদারকিতে নতুন করে ভোটগ্রহণ শুরু করান।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে। সকাল ৮টা থেকে চারটি বুথে শুরু হওয়া ভোট চলেছে বেলা ১২টা পর্যন্ত।
ভোটগ্রহণ শুরুর এক ঘণ্টা পর কেন্দ্রে উপস্থিত হন ইসি সানাউল্লাহ। এ সময় কেন্দ্রের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অরাজকতা দেখে তিনি কর্মকর্তাদের ওপর বিরক্ত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ভোটার ছাড়া অন্যদের কেন্দ্র থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন এবং নতুন করে মক ভোটিং শুরুর ব্যবস্থা করেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘শুধুমাত্র এখানে নাটক করার জন্য এ কাজটা নয়, কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরকম হ-য-ব-র-ল ও অরাজকতা থাকলে এ কাজ করে লাভ নেই।’
সঠিক কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের লক্ষ্যে তিনি পুরুষ ও নারী কেন্দ্র থেকে ২০ জন করে ভোটার বাছাই করে পুনরায় মক ভোটিং শুরু করেন।
তিনি বলেন, ‘ভোটের লাইনে দাঁড়ানো থেকে ভোট দেওয়া পর্যন্ত কত সময় লাগে তা দেখতে হবে। কারণ, এই সময়ের ওপর ভিত্তি করে ভোটকক্ষ, গোপন কক্ষ ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’
মক ভোটিংয়ে অংশ নেওয়া ভোটাররা সংসদ নির্বাচনের ব্যালটে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারলেও গণভোটের বিষয়টি নিয়ে অস্পষ্টতার কথা জানিয়েছেন।
শফিকুল ইসলাম নামের একজন ভোটার জানান, তিনি সংসদ নির্বাচনের ব্যালটে ভোট দিয়েছেন খুব সহজে। আর গণভোটের ‘হ্যাঁ/না’ ভোট দিয়েছেন না বুঝেই।
তিনি বলেন, ‘গণভোট নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা দরকার। এখানে গোলাপি রংয়ের ব্যালটে কী লেখা আছে তা পড়ার সুযোগও হয়নি, ছোট লেখায় খেয়ালও করতে পারিনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি এটা ভালোভাবে বুঝিনি। একটা টিক ও ক্রস চিহ্ন রয়েছে-একটাতে সিল মেরে দিলাম। এটা নিয়ে প্রচারণা দরকার।’
ইসি সানাউল্লাহ অব্যবস্থাপনার অভিযোগ তুললেও প্রিজাইডিং অফিসারের দাবি, ভোট ব্যবস্থাপনা ভালোভাবে করা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, ভোটার তালিকা যাচাই, ব্যালট পেপার সরবরাহ এবং সিল দেওয়াসহ সব মিলিয়ে প্রতি ভোটারের এক মিনিটের মতো সময় লাগছে।
সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার জানান, প্রথম ঘণ্টায় কেন্দ্রের চারটি বুথে যথাক্রমে ২৩, ৩৭, ২৭ ও ২১ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।
পরে বেলা ১০টা ১৫ মিনিটে মক ভোটিং পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে ওই কেন্দ্রে উপস্থিত হন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, আগামী ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সিইসি আরও বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয় ভোটকেন্দ্র বাড়াব। এর আগে আমরা হিসাব করে দেখেছিলাম—একজন ভোটারকে ভোট দিতে কত সময় লাগে। আজ আমরা রিয়েল-টাইম অ্যাসেসমেন্ট করব। প্রয়োজনে ভোটকেন্দ্র বাড়ানো হবে। এখানে খরচ বড় বিষয় নয়—সময়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘যদি দেখা যায় বুথ বাড়ানো দরকার, সেটিও করা হবে। ভোটারকে কষ্ট দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়।’
বিডি প্রতিদিন/নাজিম