খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরের প্রধান ফটকের সামনে কুপিয়ে ও গুলি করে দুই যুবককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের দাবি, আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এ হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
নিহতরা হলেন পূর্ব রূপসা বাগমারা এলাকার ফজলে রাব্বী রাজন (২৭) ও নতুন বাজার এলাকার হাসিব হাওলাদার (৩১)। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে হাজিরা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের কোপানো হয়।
পুলিশ জানায়, একটি অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিয়ে রাজন ও হাসিব আদালতের প্রধান ফটকের কাছে রাস্তায় মোটরসাইকেল রেখে কথা বলছিল। এ সময় ২২ থেকে ২৫ বছর বয়সি ৬-৭ জন তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তারা ফুটপাতে পড়ে গেলে ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া হত্যাকাণ্ডের সময়কার একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, অল্প বয়সি এক যুবক ফুটপাতে পড়ে থাকা একজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাচ্ছে। এ সময় গুলির শব্দ শোনা যায়। মানুষ দিগি¦দিক ছুটতে থাকে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া ৬-৭ জন ঘটনাস্থল থেকে বন বিভাগ অফিসের দিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এদিকে দুর্বৃত্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আহত দুজনকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রাজনের স্বজনরা জানান, ৬-৭ মাস আগেও একবার সন্ত্রাসীরা রাজনকে গুলি করেছিল। কিন্তু গুলিটি তার পায়ে বিদ্ধ হলে সেই সময় প্রাণে বেঁচে যান। সর্বশেষ যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের পর দায়ের হওয়া মামলায় হাজিরা দিতে এসে গুলিতে নিহত হলেন রাজন। গুলিবিদ্ধ হাসিবের ভাই শাকিল হাওলাদার বলেন, কিছুদিন আগে তার ভাইয়ের নামে একটা অস্ত্র মামলা হয়। সেই মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে এসেছিল তার ভাই। সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, নিহত দুজনের নামে হত্যা, অস্ত্র, বিশেষ ক্ষমতা আইনে ছয়টি করে মামলা আছে। তারা একটি শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য বলে জানা গেছে। আড়াই মাস আগে তারা জামিনে কারাগার থেকে বের হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার শিহাব করিম বলেন, কারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, কেন গুলি করা হয়েছে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্বে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে পুলিশ দাবি করছে।
এদিকে পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর খুলনায় অর্ধশত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গুলি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলার ঘটনা ঘটে শতাধিক। কয়েকটি ঘটনায় সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জানা গেছে, এরপরও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। ফলে নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটছে নগরবাসীর।