ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একই দিনে হবে। এ লক্ষ্যে প্রস্তুতি শেষ করে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে এনেছে নির্বাচন কমিশন। একই সঙ্গে তফসিল ঘোষণা হলে প্রথম দিন থেকে আচরণবিধি প্রতিপালনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর ভূমিকা রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
কমিশন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভোট কেন্দ্রে মোতায়েন থাকার পাশাপাশি নির্বাচনি এলাকায় ভ্রাম্যমাণ ও ‘রিজার্ভ ফোর্স’ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রাখা হবে। বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনী থাকছে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া আছে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, সেটা বহল থাকবে। গতকাল সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ ব্যক্তি ও প্রতিনিধিদের নিয়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। সেখানে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, কোস্টগার্ড, র্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা/বিভাগের প্রধান ও প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা, সমন্বয়, দিকনির্দেশনামূলক সভা’র সার্বিক বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ইসি সচিব আখতার আহমেদ। তিনি বলেন, ইসির স্পষ্ট বার্তা হচ্ছে, একটা সুষ্ঠু, সুন্দর, সার্বিক উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন বাস্তবায়ন করার জন্য সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে এবং নিজস্ব দায়িত্ব নিজের আওতায় পালন করতে হবে। ব্যত্যয় হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
ভোটের নিরাপত্তায় কত সদস্য : এবারের নির্বাচনে পৌনে ১৩ কোটি ভোটার রয়েছেন। ৩০০ আসনে প্রায় ৪৩ হাজার কেন্দ্রে ২ লাখ ৬০ হাজারের মতো ভোটকক্ষ থাকবে। প্রাথমিক সভায় ভোটের আগে-পরে আট দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব আসে এবং ভোট কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য রাখার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৭ লাখের বেশি সদস্য ভোটে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। কেন্দ্রের দায়িত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সংখ্যাই হবে সাড়ে ৫ লাখের মতো। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ৯০ হাজারের বেশি। এ ছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড রয়েছে।
তিন স্তরে মোতায়েন, তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা : নির্বাচনি এলাকা ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় বাহিনীর সদস্যদের কেন্দ্রে রাখার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ ও রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে মোতায়েন করবে ইসি।
সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ইসির মোতায়েন পরিকল্পনায় মূলত তিনটি ভাগ রয়েছে। একটা স্থির অবস্থায় থাকবে, যা কেন্দ্রভিত্তিক, কেন্দ্রে কিছু নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকবেন। এর সঙ্গে থাকবে চেকপোস্ট, বিভিন্ন চেকপোস্টের মাধ্যমে, কোনো স্থানে চেকপোস্ট হতে পারে, মোবাইল চেকপোস্ট হতে পারে। মোবাইল চেকপোস্ট হলে হয়তো এক জায়গায় করা হলো; সেখান থেকে আবার ২ কিলোমিটার দূরে, সেটাও আবার স্থির অবস্থার চেকপোস্ট হবে।
পরিকল্পনার দ্বিতীয় অংশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ভ্রাম্যমাণ রাখার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, মোটামুটিভাবে তারা ঘুরে ঘুরে ঘুরে দেখবেন। কেন্দ্রগুলোর ভৌগোলিক অবস্থান, সেখানে যাওয়ার সড়ক, এসব সার্বিক বিষয় বিবেচনায় রেখে (৫-১০টা কেন্দ্রে ভাগ করে) সংশ্লিষ্ট বাহিনী ঠিক করবে। আর (তৃতীয়টি) আরেকটা থাকতে হবে ‘সেন্ট্রাল রিজার্ভ’। এ ছাড়া ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) অ্যাপকেও কাজে লাগাবে ইসি।
সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা বহাল রয়েছে : এক প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সামরিক বাহিনী থাকছে। তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া আছে ২৮ ফেব্রুয়ারি পযন্ত, সেটা বহল থাকবে। আরপিওর সঙ্গে তা সাংঘর্ষিক হবে না।
সাংঘর্ষিক হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি দেখছেন না।
আচরণবিধি প্রতিপালন প্রথম দিন থেকে : আচরণবিধি প্রতিপালনে দল, প্রার্থীসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছে নির্বাচন কমিশন। আখতার আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর আচরণবিধি প্রতিপালনের ব্যাপারে সবাইকে বলেছি, প্রথম দিন থেকেই আচরণবিধির সুষ্ঠু প্রয়োগ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের অবস্থানটা অত্যন্ত স্পষ্ট, প্রথম দিন থেকে আচরণবিধি প্রতিপালন যেন যথাযথভাবে হয় এবং সে কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেন সম্পূর্ণ সহযোগিতা করেন।’