চারটি অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। অনুমোদিত চারটি অধ্যাদেশ হলো দুর্নীতি দমন কমিশন (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫, মানব পাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ ২০২৫, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫।
গতকাল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে খসড়াগুলোর নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। বৈঠক শেষে বিকালে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
প্রেস সচিব বলেন, শেখ হাসিনার আমলে দুর্নীতি যেভাবে বিস্তার লাভ করেছিল, সেটা প্রতিরোধ করতে সংস্কার কমিশন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নিয়ে অনেক সুপারিশ দিয়েছিল।
দুদককে আরও কার্যকর করতে নতুন আইনটি করা হয়েছে। অধ্যাদেশ অনুযায়ী দুদকে পাঁচজন কমিশনার থাকবেন। একজন থাকবেন আইটি জ্ঞানসম্পন্ন। কারণ এখনকার অনেক বড় বড় দুর্নীতি আইটির সহযোগিতায় করা হয়। এক ক্লিকে ১০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যায়। একজন নারী কমিশনার থাকবেন। দুদকের কাজের প্রতিবেদন এখন থেকে তাঁরা ছয় মাস অন্তর অনলাইনে পোস্ট করবেন। এ ছাড়া দুদক কর্মকর্তাদের নিয়মিত সম্পদের হিসাব দিতে হবে। মানব পাচার ও অভিবাসী চোরাচালান প্রতিরোধ ও দমন অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ পাচার হয়। টাকাপয়সা নিয়ে বিদেশে পাচার করা হয়। বিদেশে যাওয়ার পর অনেকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নিয়ে নেওয়া হয়। নতুন আইনে মানব পাচারে জড়িত থাকলে তাদের ব্যাংক হিসাব নিষ্ক্রিয় করা, সম্পদ জব্দ করা, বিদেশগমনে বাধাদানসহ নানান বিধিনিষেধ যুক্ত করা হয়েছে। ভিকটিমদের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে জোর দেওয়া হয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মানব পাচারের বিজ্ঞাপন বন্ধ করা, ভিকটিমদের নিরাপত্তার বিষয়গুলোয় জোর দেওয়া হয়েছে।
রাজউক অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম জানান, রাজউকের কাজের পরিধি বেড়ে গেছে। বর্তমান আইন দিয়ে অনেক কিছুই অ্যাড্রেস করা যাচ্ছে না। এজন্য পুরোনো আইন সংশোধন করে নতুন অধ্যাদেশ অনুমোদন করা হয়েছে। নতুন আইনে ইমারত নির্মাণ, জলাধার খনন, নিচুভূমি ভরাট, প্রাকৃতিক জলাধারের প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করা, খেলার মাঠ-উদ্যান ও প্রাকৃতিক জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। রাজউকের অনুমোদনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণের বিধান অধ্যাদেশে আনা হয়েছে। এ ছাড়া রাজউক চেয়ারম্যান, সদস্য বা কোনো কর্মচারীর রাজউকের শেয়ার, স্বার্থ বা লাভজনক চুক্তিতে অংশগ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রেস সচিব বলেন, রাজউক তার আওতাধীন এলাকায় দায়িত্ব পালন করছে। সারা দেশে প্রচুর বহুতল ভবন হচ্ছে। এজন্য প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এমন কোনো কর্তৃপক্ষ করা যায় কি না যারা সারা দেশে ভবনের অনুমোদন দেবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন আইনে কমিশনের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে জাতীয় প্রতিরোধব্যবস্থা হিসেবে কাজ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন আটক করার স্থান স্বাধীনভাবে পরিদর্শনের এখতিয়ার থাকবে কমিশনের।