উপদেষ্টারা নির্বাচন করতে চাইলে এখনই পদত্যাগ করা উচিত, অন্যথায় সরকারের নিরপেক্ষতাসহ নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। শনিবার এফডিসিতে “নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাইফুল হক বলেন, এনসিপি বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনী জোটে যাওয়ার বিষয়ে দোলাচলে আছে। ইসলামী দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে। তবে পেন্ডুলামের মতো দোদুল্যমান না হয়ে নীতি–আদর্শ মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। অতীতে চর দখলের যে চর্চা হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি আমরা ভবিষ্যতে দেখতে চাই না।
তিনি বলেন, ক্ষমতায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিত্তবৈভব অর্জনের যে প্রতিযোগিতা আগে দেখা গেছে, তার পুনরাবৃত্তি হলে জুলাই অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। এবারের নির্বাচনে কেবল ‘মার্কা’ দেখে ভোট হবে না; প্রার্থীর গুণাগুণ ও দলীয় আদর্শ দেখে ভোট দেবে মানুষ। আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল ভোটাধিকার হরণ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সরকার পরিবর্তনের পথ রুদ্ধ করা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও তাদের সমর্থকরা কোনো একটি দলকে এককভাবে ভোট দেবে—এটা বলা কঠিন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতা আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি। এতে ঢাকা কলেজকে পরাজিত করে ইডেন মহিলা কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।
সভাপতির বক্তব্যে কিরণ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। সব বাঁধা অতিক্রম করে ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হবে। বিএনপি–জামায়াতের তর্ক–বিতর্কে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে না; তাদের মত–বিরোধ গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। প্রার্থী ও ভোটাররা ঐক্যবদ্ধ থাকলে দু–চারটি জঙ্গি মিছিল বা অগ্নিসংযোগ করে কোনো অপশক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে না। লেভেল প্লেইং ফিল্ড বজায় থাকলে ব্যাপকসংখ্যক ভোটার নির্ভয়ে ভোট দেবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। যেন ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে দুর্নীতির পালাবদল না হয়। আগের মতো কেউ নিজেকে রাষ্ট্র মনে করলে তার পরিণতি শেখ হাসিনার মতো হবে। এবারের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে পুলিশের বডি ক্যামেরা ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনে দায়িত্বশীল আচরণ না হলে আবারও ধানক্ষেত–পাটখেতে ভোটের বাক্স পাওয়া যেতে পারে—যা কাম্য নয়।
কিরণ আরও বলেন, আমাদের মতো দেশে বড় সমস্যা হলো ‘উইনার ওয়ান্টস টু টেক অল’। বিজয়ী সবকিছু নিতে চায়, আর যারা জেতেনি তারা হয়রানির শিকার হয়। ফলে কেউ হারতে চায় না। তবে আশা করি, আগামী সরকার বিরোধী দল ও মতের গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই ছায়া সংসদে বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন, সাংবাদিক সাইদুর রহমান ও সাংবাদিক মসিউর রহমান খান। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/তানিয়া