পটুয়াখালীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) আওতায় উন্নয়ন প্রকল্পের নেওয়া অনেক সড়ক এখন জনগণের কাছে দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সদর উপজেলার করমজাতলা সড়ক থেকে বহালগাছিয়ার ড্রেনেজ-সবখানেই আংশিক কাজ করে ফেলে রাখা হয়েছে। গলাচিপা উপজেলার ছোনখোলা, কলাপাড়ার বালিয়াতলী কিংবা মির্জাগঞ্জ উপজেলার চরখালী সড়কেরও একই চিত্র। কোথাও ভাঙা সেতুর পাশে নৌকায় পারাপার, কোথাও খোয়া বিছানো অসম্পন্ন রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে। এতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে মানুষ। ঠিকাদার পালিয়ে যাওয়ায় এলজিইডির আওতায় পটুয়াখালীতে নেওয়া ২২টি প্রকল্পে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এসব প্রকল্পের কাজ বরাদ্দ ছিল ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির মালিকের নাম মিরাজুল ইসলাম। গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি লাপাত্তা। তার স্থানীয় প্রতিনিধিদেরও খবর নেই। এ জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলার লাখো মানুষকে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদার মিরাজুল ইসলাম পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজের ভাই। দক্ষিণাঞ্চলের ঠিকাদারদের ভাষায়, ওই সময় এলজিইডির কাজ মানেই ‘মিরাজ-মহারাজ সিন্ডিকেট’। পিরোজপুর, পটুয়াখালীসহ আশপাশের জেলায় একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ছিল মিরাজুল ইসলাম ও তাদের পরিবারের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের। পটুয়াখালী এলজিইডি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২, ২০২২-২৩, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মিরাজুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল প্রাইভেট লিমিটেড এর নামে ২২টি প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২টি, গলাচিপায় তিনটি, মির্জাগঞ্জে তিনটি, কলাপাড়ায় দুটি, দুমকীতে একটি এবং রাঙ্গাবালীতে একটি প্রকল্প রয়েছে।
এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে সদর উপজেলায় কালিকাপুর ইউপির বহালগাছিয়া পাকার মাথা হতে পটুয়াখালী লঞ্চঘাট ভায়া ২ নম্বর বাধঘাট এবং পুরান বাজার রোড চেইনেজ ১৪১৫-১৮৮৫ মিটার পর্যন্ত কাজের ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৪১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৪৯ টাকা। কাজটি ২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এর অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। একই অবস্থা অন্য প্রকল্পগুলোরও। এসব প্রকল্পের অসমাপ্ত সড়ক ও সেতুতে তৈরি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। এলজিইডির একাধিক প্রকৌশলী বলছেন, সদর উপজেলার করমজাতলা সংযোগ সড়ক, বহালগাছিয়ার ড্রেনেজ, গলাচিপার ছোনখোলা ও লামনা, কলাপাড়ার বালিয়াতলী, মির্জাগঞ্জের চরখালী থেকে কেওয়াবুনিয়া সবখানেই আংশিক কাজ হওয়ার পর তা পড়ে আছে। অথচ কোনো কোনো প্রকল্প থেকে অর্ধেক কাজের বিপরীতে টাকাও তুলে নেওয়া হয়েছে। সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের পশুরবুনিয়ার এলাকার গৃহিণী সালমা আক্তার বলেন, ‘রাস্তায় বিছানো খোয়ার মধ্যে হাঁটতে গিয়ে জুতা নষ্ট হয়। স্লিপ কেটে মানুষ পড়েও যায়। এ সড়ক দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। করমজাতালা এলাকার রিকশাচালক হাসিব মিয়া ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, শুনছি ঠিকাদার টাকা খাইয়া কাজ থুইয়া পলাইছে। রাস্তাগুলো ভাইঙ্গাচুইরা রইছে।’ জৈনকাঠী এলাকার বাসিন্দা আল আমিন মৃধা বলেন, বর্ষার সময় খোয়ার ধোয়া পানিতে জামা-কাপড় নষ্ট হয়েছে এখন আবার শুকনো মৌসুমে ধুলা বালিতে দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএলের মালিক মিরাজুল ইসলাম পলাতক থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এলজিইডির পটুয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হোসেন আলী মীর বলেন, ইফতি-ইটিসিএল-এর ২২টি প্রকল্পের গড়ে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারকে না পাওয়ায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমি অসমাপ্ত কাজগুলো বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় ঠিকাদাররা মূল ঠিকাদারের প্রতিনিধি (সাব ঠিকাদার) হিসেবে কাজ করেছেন মর্মে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রকৌশলী ও (আমার) নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।