মাদকে নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার, অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে খুলনায় সিরিজ হত্যাকাণ্ডে উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় গ্যাং তৈরি করে চাঁদাবাজি অস্ত্র মামলা ইভটিজিং ধর্ষণের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে অপরাধীরা।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অভ্যুত্থানের পর ১৬ মাসে খুলনা নগরীতে ৪৮টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ, মাদক ও আধিপত্য বিস্তার জেরে হত্যাকাণ্ড হয় ২০টি। জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির তথ্যমতে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে খুলনা জেলায় ৭২টি খুনের ঘটনা ঘটে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৪৫টি ও নগরীতে আরও ২৭টি খুন হয়। পাশাপাশি অস্ত্র আইনে ৬৫টি, ধর্ষণ ৯২টি ও মাদকের মামলা হয় ৯৬২টি।
সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে গুলি করে ফজলে রাব্বী রাজন ও হাসিব হাওলাদার নামের দুই যুবককে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা একটি অস্ত্র মামলায় হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বের হচ্ছিলেন। পুলিশের দাবি আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে তারা খুন হয়।
বেশির ভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে
জুলফিকার আলী হায়দার , খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার
এর আগে ২ নভেম্বর রাতে আড়ংঘাটা কুয়েট আইটিগেট সংলগ্ন যোগীপোল ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মামুন শেখের অফিসের বোমা হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটে। এতে ইমদাদুল হক (৫৫) নামে মাদ্রাসা শিক্ষক নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় মামুন শেখসহ তিনজন। ১১ জুলাই যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানকে বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। বিএনপি নেতারা একে রাজনৈতিক খুন বলে দাবি করেন।
খুলনায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আনাগোনা ও সিরিজ হত্যায় উদ্বিগ্ন রাজনৈতিক নেতারা। খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী সাবেক মহানগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিভিন্ন ঘটনায় ভাড়াটে খুনি, অস্ত্রবাজদের ব্যবহারে তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। এতে শুধুমাত্র প্রার্থী, রাজনৈতিক দলের নেতা নয়, সাধারণ মানুষও উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী চরমপন্থিরা এলাকায় ফিরতে থাকে। খুলনায় শীর্ষ চারটি সন্ত্রাসী গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে শতাধিক গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। সচেতন নাগরিক সংগঠন, খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাড. বাবুল হাওলাদার বলেন, সন্ত্রাসীদেরকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। একের পর খুন হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। অপরাধীদের তালিকা আছে যারা বৈধ অস্ত্র জমা দেয়নি তার তালিকা আছে। কিন্তু সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে প্রশাসন। দায় এড়াতে পারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তৎপর রয়েছে। বেশির ভাগ হত্যার কারণ উদ্ঘাটন করা হয়েছে। হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে।