বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে তাঁর মেয়ে শামারুহ মির্জা সম্প্রতি ফেসবুকে হৃদয়স্পর্শী ও প্রতিবাদী পোস্ট দিয়েছেন। এ পোস্টটি শুধু আবেগ নয়, বরং একজন জাতীয় নেতার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ত্যাগ, সততা এবং দেশের প্রতি তাঁর অবিচল ভালোবাসার প্রামাণ্য দলিল। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে চলা ‘মিথ্যাচার, চরিত্রহনন ও মানসিক অত্যাচার’ নিয়ে মেয়ের তীব্র ক্ষোভ ও প্রশ্ন পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাঁর পোস্টটি নেটদুনিয়ায় ব্যাপক সাড়া ফেলে।
শামারুহ মির্জা তাঁর পোস্টে গভীর বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন-কেন ২০২৪ সালের আগস্টের পর তাঁর বাবার বিরুদ্ধে একের পর এক ভিত্তিহীন অভিযোগ, চরিত্রহনন এবং মানসিক নিপীড়ন চালানো হচ্ছে তিনি কয়েকটি প্রশ্ন ছুড়েছেন, যার মাধ্যমে মির্জা ফখরুলের সততা ও জনস্বার্থের প্রতি অঙ্গীকারকে দৃঢভাবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
‘তিনি কি অসৎ না। তিনি কি ঘুষখোর না। তিনি কি জনবিরোধী না। তিনি কি জুলাইবিরোধী? না। ...’
এ প্রশ্নগুলোর মাধ্যমে তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কখনোই কোনো অসৎ কাজ বা জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। তাঁর মতে তাঁর বাবা সব সময় একাত্তরের চেতনা ধারণ করেন এবং একটি সুস্থ ও সুন্দর জাতি গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। দেশ ও জাতির প্রতি তাঁর এ ভালোবাসা আপসহীন।
মির্জা ফখরুলের দীর্ঘ এবং সংগ্রামমুখর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের চিত্র তুলে ধরে শামারুহ মির্জা বলেছেন, ৪৫ বছর ধরে তিনি দেশের বৃহত্তর গণতান্ত্রিক আকাঙ্খার পক্ষে অবস্থান করছেন। এ দীর্ঘ রাজনৈতিক পথচলায় তাঁকে বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার কারণে দীর্ঘ সময় এবং বারবার জেলে যেতে হয়েছে।ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের আক্রমণের শিকার হওয়া, এমনকি তাঁর বাসভবনে বোমা হামলার মতো ঘটনাও তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন। এ পথচলায় তাঁকে চরম অপমানের শিকার হতে হয়েছে বলেও তিনি গভীর দুঃখের সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন। দলের প্রতি অঙ্গীকারের কারণে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়া সত্ত্বেও দলের বৃহত্তর স্বার্থে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। পোস্টে উঠে এসেছে, ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও তাঁর বাবার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, যা প্রমাণ করে দীর্ঘ সময় ধরেই তিনি রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার।
পোস্টে শামারুহ মির্জা তাঁর বাবার নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতি অবদানের কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান, বিএনপি সরকারের আমলে তাঁর বাবা ঠাকুরগাঁওয়ের উন্নয়নে বহু ভালো কাজ করেছেন এবং এমন কোনো কাজ করেননি যা এলাকার মানুষের ক্ষতি করতে পারে। কৃষি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে বরেন্দ্র প্রকল্পকে গুরুত্ব দেওয়া এবং বিমানমন্ত্রী থাকাকালে বিমান বিক্রি করা নিয়েও তিনি আলোকপাত করেন, যা প্রমাণ করে তাঁর সব কাজই ছিল জনস্বার্থমুখী ও স্বচ্ছ। এ আবেগঘন পোস্টের মাধ্যমে শামারুহ মির্জা কেবল তাঁর বাবার প্রতি চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে গভীর ক্ষোভ প্রকাশ করেননি, বরং একজন জাতীয় নেতার রাজনৈতিক সততা, দেশের প্রতি ভালোবাসা এবং দীর্ঘদিনের ত্যাগের ইতিহাস জাতির সামনে তুলে ধরেছেন। তাঁর এ হৃদয়স্পর্শী প্রতিবাদী পোস্ট দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। প্রশ্ন উঠেছে-সৎ ও ত্যাগী নেতাদের প্রতি এ ধরনের মানসিক নিপীড়ন কেন?