তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে থিম্পুর উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে। দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বন্ধুত্ব ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর লক্ষ্যে এই সফরে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ইতিবাচক অগ্রগতির কথা জানানো হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে। গত শনিবার ঢাকা সফরে আসা ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে গতকাল সকালে তা শেষ করেন।
সফর শেষে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার উষ্ণ এবং সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পূর্ণাঙ্গ পর্যালোচনা করেন। বিশেষ গুরুত্ব দেন বাণিজ্য, সংযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বাড়াতে। প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের নতুন সুযোগ নিয়ে আলোচনা করেন। ঢাকা ভুটানের রাজার গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি উদ্যোগের প্রশংসা করে এবং সমর্থন দেওয়ার ইচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করে। উভয় পক্ষ কুড়িগ্রামে ভুটানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ইতিবাচক অগ্রগতির কথা উল্লেখ করে। বাংলাদেশ সরকার-টু-সরকার ভিত্তিতে ভুটানে ওষুধ সরবরাহের প্রস্তাব দেয়, যা ভুটানের জনগণের জন্য সাশ্রয়ী ও মানসম্মত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করবে। দুই দেশের নেতা ট্রাফিক-ইন-ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়নে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহনের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন।
যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, গত বছর ভুটানের রাজার সফরের পর বাংলাদেশের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য এমবিবিএস বা বিডিএস আসনের বার্ষিক বরাদ্দ ৩০ জনে উন্নীত করায় প্রধানমন্ত্রী তোবগে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য বাংলাদেশ বুয়েটে ভুটানি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছর ১০টি নির্দিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং আসন, ক্রীড়া বিজ্ঞানে ডিপ্লোমার জন্য বিকেএসপিতে একটি নির্দিষ্ট আসন, ভুটানি ক্রীড়া দলের জন্য হোম-গ্রাউন্ড সুবিধা এবং ভুটানি বিশেষজ্ঞদের জন্য বিশেষায়িত পেশাদার প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছে। উভয় নেতা সার্ক এবং বিমসটেকসহ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক এবং উপ-আঞ্চলিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন, যা অভিন্ন মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সাধারণ আকাঙ্খার ওপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়াও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির প্রতিনিধিদল, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিকরা আলাদাভাবে ভুটানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।