হার্ট ব্লক বলতে হার্টের রক্তনালির ব্লক বা প্রতিবন্ধকতাকেই বোঝানো হয়। হার্টের নিজস্ব রক্তের চাহিদা (অক্সিজেন ও রসদ) পূরণ করার জন্য যেসব রক্তনালি বিদ্যমান আছে, তাদের হার্টের রক্তনালি বা করোনারি আর্টারি নামে অভিহিত করা হয়। রক্তনালির ব্লকগুলো বিভিন্ন অবস্থায় ছড়ানো ছিটানো থাকে। ব্লক থাকার কারণে ব্যক্তির হার্টের বিভিন্ন অংশে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়। হার্টের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ কমতে থাকলে প্রাথমিক অবস্থায় এনজিনা, পরবর্তী সময়ে হার্টের মাংসপেশির আক্রান্ত কোষগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। পরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়। আরও বেশি দীর্ঘস্থায়ী অক্সিজেন ও রসদের অভাব দেখা দিলে মাংসপেশির আক্রান্ত কোষগুলো মৃত্যুবরণ করে। পরবর্তী সময়ে মাংসপেশির কোষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় হার্ট ক্রমাগতভাবে দুর্বল হতে থাকে। এখানে বলা যেতে পারে, যদি ধরা হয় আনুমানিক ১০ লাখ মাংসপেশির কোষ ছিল, রক্ত সরবরাহের প্রতিবন্ধকতার জন্য ২ লাখ কোষ মৃত্যুবরণ করল। তার মানে ১০ লাখের জায়গায় এখন ৮ লাখ কোষ কাজ করছে। এতে হার্ট কিছুটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। হার্ট কতটুকু দুর্বল হবে তা নির্ভর করে হার্ট ব্লকের কারণে মাংসপেশির কোষের সংখ্যা কতটুকু কমে যায়। তার মানে, যদি ৬ লাখ কোষ মারা যায় তাতে বাকি ৪ লাখ কোষ কাজ করে। এতে ব্যক্তি সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে উঠতে থাকেন। হার্ট ব্লকের কারণে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়, প্রথমে বলতে গেলে হার্ট স্ট্রোক/হার্ট অ্যাটাক/মায়ো-কার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন, যা তাৎক্ষণিক জীবনহানির কারণ হয়ে থাকে এবং হার্টকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব ক্ষেত্রে রোগীরা বুকে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা অনুভব করেন, তার সঙ্গে প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা ও প্রচণ্ড ঘেমে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়।
দ্বিতীয়ত, কারও হার্টের অবস্থা ব্লকের কারণে ক্রমাগতভাবে দুর্বল হতে থাকে, এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় রোগী পরিশ্রমকালীন বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, ঘেমে অস্থিরতা ভাব-এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ অবস্থাকে মেডিকেলের ভাষায় ক্রনিক স্টেবল এনজিনা (দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল) বলা হয়। এখানে অসুস্থতা বলতে রক্ত সরবরাহের স্বল্পতাকে বোঝানো হয়, যা আমাদের হার্টের বিভিন্ন অংশে হতে পারে। বিশেষ করে হার্টের যেসব অংশে ব্লক বিদ্যমান রয়েছে, হার্ট ব্লকে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী এমতাবস্থায় উল্লিখিত উপসর্গে ভুগতে থাকেন, এ ধরনের অবস্থা সাধারণভাবে হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে যাওয়া রোগী ও হার্ট ব্লকের রোগী উভয়ের ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। আপনার হার্টে ব্লক আছে কি নেই তা বিভিন্নভাবে শনাক্ত করা হয়ে থাকে। চিকিৎসক আপনার বিবরণ শুনে ইসিজি, ইকো কার্ডিওগ্রাম, ইটিটি টেস্ট করে সহজেই আপনাকে অবহিত করতে পারেন। আপনি যদি রিং অথবা বাইপাস অপারেশন করতে আগ্রহী হন তখন এনজিওগ্রাম করে আপনার ব্লকের পরিমাণ, সংখ্যা নির্ণয় করা জরুরি। তবে কেউ যদি নিজের সন্দেহের অবসান ঘটানোর জন্য এনজিওগ্রাম করে ব্লক নির্ণয় করতে চান তা করা যেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে অনেকেই কনভেনশনাল এনজিওগ্রাম না করে সিটি করোনারি এনজিওগ্রাম করতে চান। সেটাও আপনার বা রোগীর ইচ্ছা। হার্ট ব্লক চিকিৎসায় প্রচলিত বা প্রাথমিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলো প্রাথমিক অবস্থায় জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে তার সঙ্গে মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। শারীরিক অনেক বিষয় নিয়ন্ত্রণে রাখা। যেসব রোগী উপরোল্লিখিত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতাবোধ না করেন বা হার্ট অ্যাটাকের মতো জটিল অবস্থায় পতিত হন, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতি রিং অথবা বাইপাস অপারেশন করে চিকিৎসা গ্রহণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া যেসব ব্যক্তি রিং বা বাইপাস অপারেশনে অনিচ্ছুক অথবা রিং বাইপাস অপারেশনে ভয় পান অথবা যারা ইতিঃপূর্বে রিং বাইপাস অপারেশন করে আবার অসুস্থতা বোধ করছেন এবং অন্যান্য জটিল অসুস্থতায় আক্রান্ত তাদের সবার জন্য ইসিপি থেরাপি বর্তমানে অন্যতম চিকিৎসা পদ্ধতি। এই চিকিৎসায় কোনো ধরনের অপারেশন বা কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন নেই। এমনকি কোনোরকম সাইড-ইফেক্টও নেই, সব বয়সের রোগীর জন্য প্রযোজ্য। বিশেষভাবে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে উত্তম চিকিৎসা পদ্ধতি, এ পদ্ধতিতে হার্ট ব্লক চিকিৎসাও কার্যকরী।
-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালট্যান্ট
শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা