বাংলাদেশের ‘দুধের রাজধানী’ খ্যাত পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলায় গড়ে উঠেছে নকল দুধের ভয়ংকর কারবার। শতাধিক গোপন কারখানায় এই সিন্ডিকেট রাসায়নিক মিশিয়ে তৈরি করছে দুধের নামে ‘সাদা বিষ’। এ অঞ্চলে খাঁটি দুধের বিশাল বাজারের আড়ালে চলছে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড। দীর্ঘ অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে অবৈধ কারবারের চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, নকল দুধ খেলে দুরারোগ্য বিভিন্ন রোগ এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরে ছোট ছোট ঘরে গড়ে তোলা গোপন এসব কারখানায় তৈরি হচ্ছে এ নকল দুধ। ননী বা ফ্যাট তুলে নেওয়া পাতলা দুধ ও পানির সঙ্গে সয়াবিন তেল, গ্লুুকোজ, স্যাকারিন, ইউরিয়া, ডিটারজেন্ট পাউডার, কস্টিক সোডা ও রাসায়নিক জেলি মিশিয়ে তৈরি করা হয় এ তরল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারবারি জানান, ফ্যাটহীন ৪০ লিটার দুধে মাত্র ৪৫০ টাকার রাসায়নিক মিশিয়ে ‘উচ্চ ফ্যাটযুক্ত’ নকল দুধ তৈরি করা হয়। যা বিক্রি করে প্রায় ১৭৫০ টাকা বাড়তি আয় হয়। এই নকল দুধ বিভিন্ন নামিদামি কোম্পানির চিলিং সেন্টারে সরবরাহ করা হয়। শুধু ভাঙ্গুড়াতেই ২৭টি নামিদামি কোম্পানির চিলিং সেন্টারসহ অর্ধশতাধিক দুগ্ধ কেন্দ্র রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কারবারি আরও জানান, প্রতি ৪০ লিটার নকল দুধ চিলিং সেন্টারে নেওয়ার জন্য কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে ৫০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ দিলেই মান নিয়ন্ত্রণের কোনো ঝামেলা থাকে না।
মাঝে-মধ্যে নকল দুধের কারখানাগুলোতে অভিযান চালানো হলেও বাস্তবে কোনো কাজেই আসছে না। চলতি বছরের ২২ জুলাই চাটমোহরের নাঙ্গলমোড়া গ্রামে প্রাণ কোম্পানির সেন্টারে অভিযান চালিয়ে নকল দুধ, তেল ও কেমিক্যাল জব্দ করা হয়। সেখানে ৩ কর্মকর্তাকে ছয় মাস করে কারাদ াদেশ দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, ভাঙ্গুড়ার প্রভাবশালী নকল দুধ সিন্ডিকেটের কয়েকজনের নাম। তাদের মধ্যে রয়েছে উপজেলার সারুটিয়ার সোহাগ, উত্তর মেন্দা শান্তিনগরের হাফিজ, নয়ন ও ফারুক, শাহনগরের সাখাওয়াত, ছোট বিশাকোলের সঞ্জয় ঘোষসহ আরও অনেকে। ভাঙ্গুড়ার জগাতলা আকিজ চিলিং সেন্টারের কর্মকর্তা রুহুল আমিন সাংবাদিক পরিচয় জানার পর কোনো মন্তব্য করেনি। প্রাণ ডেইরির কর্মকর্তাও কথা বলেননি। জগাতলা আড়ং ডেইরির চিলিং সেন্টারের কর্মকর্তা চিলিং সেন্টার ও ল্যাবে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান।
উপজেলা দুগ্ধ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমেদ বলেন, সৎ ব্যবসায়ীরা নকল দুধের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হালিমা খানম জানান, নকল দুধ দীর্ঘদিন ধরে খেলে ক্যানসার, বিকলাঙ্গ, শিশুর বিকাশগত সমস্যা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। ডিটারজেন্ট পাউডার, কস্টিক সোডা ও ইউরিয়া মানুষের কিডনি, লিভার ও হরমোন সিস্টেমেরও স্থায়ী ক্ষতি করে।