রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিরসনে একটি শান্তি চুক্তির 'খুব কাছাকাছি' পৌঁছানো গেছে বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এই চুক্তির ভিত্তি হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের যে প্রস্তাবটিকে ধরা হচ্ছে, তাতে বড় পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে মস্কো। এর মধ্যেই বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি ছাড়াই শেষ হয়েছে ওয়াশিংটন ও কিয়েভের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা।
ইউক্রেনবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত কেইথ কেলগ ক্যালিফোর্নিয়ায় রেগ্যান ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোরামে বলেছেন, সংঘাতের সমাধানের প্রচেষ্টা শেষ ১০ মিটার দূরে রয়েছে, যদিও এই শেষ সময়টা সবচেয়ে কঠিন। চুক্তিতে পৌঁছাতে দুটি প্রধান বাধা অতিক্রম করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। একটি হলো ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে দনবাস নিয়ে ভূখণ্ডবিষয়ক সমস্যা এবং অপরটি হলো ইউরোপের বৃহত্তম জাপোরিঝঝিয়া পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার দখলে আছে।
এর আগে গত সপ্তাহে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে পাঁচ ঘণ্টা ধরে বৈঠক করেছিলেন। মস্কোর ভাষ্যমতে, যুদ্ধ বন্ধের চুক্তির জন্য তারা ইউক্রেনের পুরো দনবাস অঞ্চল চায়। যদিও দনবাসের অন্তত ৫ হাজার বর্গকিলোমিটার অঞ্চল এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রবিবার পুতিনের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান সহকারী ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাবে মৌলিক পরিবর্তন আনা দরকার।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যে তিন দিনব্যাপী ইউক্রেন-মার্কিন আলোচনা শনিবার শেষ হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি আলোচনার তৃতীয় দিনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে বাস্তবসম্মত ও গঠনমূলক আলোচনা করেছেন। টেলিগ্রামে তিনি বলেন, সত্যিকারের শান্তি আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে ইউক্রেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে যেকোনো গঠনমূলক অগ্রগতির বিষয়টি পুরোপুরি মস্কোর ওপর নির্ভর করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আলোচনার মধ্যেই ইউক্রেনে ৭০০ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ফ্লোরিডায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচনার আগের রাতে এই হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, জ্বালানি অবকাঠামো ও রেলসম্পদকে লক্ষ্যবস্তু করে চালানো এই হামলায় হাজার হাজার বাড়িতে বিদ্যুৎ ও পানিসংকট দেখা দেয়। জেলেনস্কি বলেন, হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামোগুলো, যার উদ্দেশ্য লাখ লাখ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা। যদিও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার কথা অস্বীকার করেছে ক্রেমলিন।
যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা নিয়ে সোমবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল